ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় তারল্যসংকট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে: মুডিস
বাংলাদেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া অধিকাংশ সহায়তামূলক ব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে না পারার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মুডিসের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য উদ্ধৃত করে শরিয়াহভিত্তিক বা ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় তারল্যসংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারল্য-ঘাটতির প্রভাব ব্যাংকগুলোর ঋণমানেও পড়তে পারে। এতে দেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি দায় মেটাতে সমস্যায় পড়তে পারে।
ঋণমান যাচাইকারী আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের মধ্যে মুডিস শীর্ষস্থানীয়। আরেকটি শীর্ষস্থানীয় ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হলো ফিচ রেটিংস। প্রতিষ্ঠানটিও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে।
ফিচ রেটিংসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য গত বছরের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত, অর্থাৎ এক বছরে কমেছে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৯৮২ কোটি টাকা। অতিরিক্ত তারল্য কমার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও একই রকম তথ্য রয়েছে।
ফিচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি তারল্যসংকটের চ্যালেঞ্জ হিসাব করা হয় লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও বা এলসিআর কমে যাওয়ার হিসাব ধরে। ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর এলসিআর কমে দাঁড়ায় ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০২১ সালের শেষে এই হার ছিল ১৮৮ দশমিক ৮।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের অনুপাত চলতি বছরের জুন মাসে ১০১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৪ শতাংশ। মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ-আমানতের অনুপাত এত বেশি হওয়ার অর্থ হলো, তারল্যসংকট আরও প্রকট হচ্ছে।
দেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এসব ব্যাংকে তারল্য-ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
মুডিস বলছে, ২০২২ সালে দেশের ১০টি ইসলামি ধারার ব্যাংক আইন অনুসারে তারল্য বজায় রাখতে পেরেছিল; কিন্তু ছয় মাস পর দেখা যাচ্ছে, ১০টির মধ্যে ৪টি ব্যাংক এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। ৬টি ব্যাংক বিধি অনুসারে তারল্য বজায় রাখতে পারলেও তাদের অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল কম।
দেশে শরিয়াহ ধারার ব্যাংক রয়েছে ১০টি। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংকেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এস আলম গ্রুপের হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, এসব ব্যাংকে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণে ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে ভুগছে।
সম্পদের পরিমাণ বিবেচনায় বাংলাদেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের বাজারের আকার বিশ্বে অষ্টম। এসব ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭ কোটি টাকা।
মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে, আর কমেছে সঞ্চয়। এতে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমে গেছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। ব্যাংকের আমানতে এসবের প্রভাব পড়েছে।