এমটিবির রজতজয়ন্তী

গ্রাহকেরাই আমাদের ব্যাংকের বড় দূত: সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) রজতজয়ন্তী বা ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে ব্যাংকটির অগ্রযাত্রা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম

প্রথম আলো:

রজতজয়ন্তী পূর্ণ করল মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বা এমটিবি। একটা টেকসই ব্যাংকে পরিণত হতে এ সময়ে কতটা চড়াই-উতরাই পার হতে হলো?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: আমি খুবই ভাগ্যবান যে এমটিবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ব্যাংকটা ভালো একটা জায়গায় এসেছে এর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে ব্যবস্থাপনার দিকটি দেখার জন্য যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তা অভাবনীয়। আমার দলটাও (টিম) ভালো। কোনটা পারছি, কোনটা পারছি না, কেন পারছি না—এগুলো সময়মতো পর্ষদকে জানাচ্ছি। নতুন চিন্তা, নতুন উদ্যোগের কথাও জানাচ্ছি। পর্ষদ আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমিও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রথম আলো:

বেশি বেশি মুনাফা করার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আছে ব্যাংক খাতে, আপনিও কি সে প্রতিযোগিতায় আছেন?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ব্যাংক যেহেতু ব্যবসাও, ফলে মুনাফা তো করতেই হবে। তবে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেই আমাদের ব্যাংক। আমাদের পর্ষদের কথা হচ্ছে মানুষের আমানত আছে এখানে। এ আমানত থেকেই মানুষ ঋণ নেয়। আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের সেবা দিলে ব্যবসা এমনিতেই আসবে, মরিয়া হতে হবে না। আমরা এ দর্শন অনুসরণ করে যাচ্ছি। যেকোনো উপায়ে খালি লাভ করতে হবে—এমন চিন্তায় আমিও বিশ্বাসী না। আমরা মনে করছি, গ্রাহকেরাই হচ্ছেন আমাদের ব্যাংকের দূত। তাঁরা খুশি থাকলে ব্যাংকের প্রশংসা তাঁরা করবেনই।

প্রথম আলো:

দেশে তো অনেক ব্যাংক আছে, এমটিবি কেন সবার থেকে আলাদা?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: দেশের একশ্রেণির ব্যাংক নিয়ে কিন্তু কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা ভালো আছি এবং কাজ দিয়েই আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা। সিটি ব্যাংক বা ব্র্যাক ব্যাংকের মতো আমরা অত বড় নই। তবে বাজারে আমাদের যে ভাবমূর্তি আছে, সেটাই আমাদের অন্যতম শক্তি।

প্রথম আলো:

ভালো ভাবমূর্তি তৈরি হওয়ার পেছনের শক্তিগুলো কী?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: গ্রাহকদের আমরা সম্মান করি। তাঁদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা সচেষ্ট থাকি। বিশ্বব্যাপী কাজ করা নরওয়ের একটি উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান আছে, যার নাম নরফান্ড। দেশের দুটি ব্যাংক নরফান্ডের অর্থ পেয়েছে, যার মধ্যে একক বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী হচ্ছে এমটিবি। আমরা দেখেছি যে দেশে ভ্রমণপিপাসু মানুষ অনেক বেড়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে তাদের জন্য আমাদের ৮টি লাউঞ্জ আছে। আমাদের আছে ইসলামি ব্যাংকিং বিষয়ক আর্থিক পণ্য। আগে এ ব্যাংকে যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ছিল না। তবে এখন তা আছে। খুবই ভালো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আছে এখন এমটিবিতে। ফ্ল্যাক্সিবল ফিক্সড ডিপোজিট নামে নারীদের জন্য এমন একটি আর্থিক পণ্য চালু করেছি, যা আছে শুধু এমটিবিতেই। এটা একধরনের স্থায়ী আমানত বা এফডিআর। ৫০ হাজার টাকা দিয়েই এখানে আমানত রাখা শুরু করা যাবে। জরুরি প্রয়োজনে কেউ এখান থেকে অংশবিশেষ টাকা নিতে চাইলে নিতে পারবেন, আবার এফডিআরও ঠিক থাকবে। এ ছাড়া প্রথম ভার্চ্যুয়াল কার্ড আমরাই করেছি। পরে যদিও অন্যরা করেছে। এগুলোই হচ্ছে আমাদের শক্তির জায়গা। 

প্রথম আলো:

রজতজয়ন্তী মাথায় রেখে কী লক্ষ্য ঠিক করেছে এমটিবি?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংকে রূপান্তরিত হতে চাই। আমরা হতে চাই ‘সব সময়ের ব্যাংক’। আমাদের বিতরণ করা ঋণ এখন ৩০ হাজার কোটি টাকা, যার ১২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই)। এই খাতে ঋণ ২০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই।

প্রথম আলো:

আপনি তো এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ছিলেন। কয়েক বছরে ব্যাংক খাত নিয়ে কী দেখলেন? কোথায় যাচ্ছি আমরা?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: দায়িত্ব পালনকালে দেখেছি কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। বরং কারও কারও প্রতি অন্ধ ছিল। অর্থাৎ কেউ কেউ যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা শক্ত না থাকলে ব্যাংক খাতে কিছুই হবে না। অনেক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি আছে। অনেকে অর্থ পাচার করেছে। সরকারি সংস্থাগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অনেক সংস্থার ব্যর্থতার চিত্রও আমাদের জানা। বর্তমান সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি এবং আশা করছি ব্যাংক খাতের জন্য ভালো কিছু উঠে আসবে।