ব্যাংকঋণ নিয়ে পলাতকেরা যেন কানাডায় বসে মামলায় লড়ার সুযোগ না পান: বিএবি চেয়ারম্যান

ব্যাংকপ্রতীকী ছবি

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা দেশ ছেড়েছেন, তাঁদের অনেকেই এখন পলাতক। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান এবং প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাঁরা আইনি লড়াই করছেন। শারীরিকভাবে দেশে ফিরে তাঁরা যেন আইনি লড়াই করেন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

সচিবালয়ে আজ অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। বৈঠক শেষে আবদুল হাই সরকার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

বিএবি চেয়ারম্যান বলেন, অনেকেই ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। পলাতকদের কোনো অধিকার নেই আদালতে তাঁদের প্রতিনিধি পাঠানোর। এ সুযোগ তাঁদের দেওয়া উচিত নয়। এভাবে মামলায় লড়ার চর্চা তাঁদের বন্ধ করা উচিত। আদালতে তাঁদের সরাসরি আসতে হবে। তাঁরা কানাডায় বসে থেকে দেশে মামলায় লড়ার সুযোগ যেন না পান। এটা করতে হলে তাঁরা দেশে এসে করুন। সরকারের উচিত সেই ব্যবস্থা করা। অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাবটি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ সম্পর্কে আবদুল হাই সরকার বলেন, ‘উনি ব্যাংক করতে আসেননি, এসেছিলেন অন্য কিছু করতে। করে চলেও গেছেন। তাঁর অন্যায় আবদার মানতে গিয়েই সব শেষ হয়েছে। বিদায়ী সরকারের মনোভাব ছিল অনেকটা এ রকম—এস আলম যা করতে চায়, করতে দাও।’

বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকার সময় ব্যাংক খাত ভালো ছিল মন্তব্য করে বিএবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন তখন আমি ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। তাঁর সময় তো ব্যাংকগুলো কত সুন্দর চলেছে। যখন থেকে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অন্যায় আদেশ করা হতো, সেগুলো মানতে গিয়েই তো ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে গেছে। আশা করি বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে এ অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব৷’

একটি ব্যাংক যখন সমস্যায় পড়ে যায় তখন আমানতকারীরা সেই ব্যাংকে টাকা রাখতে চান না। তাঁরা মনে করেন, এ ব্যাংকে টাকা রাখলে নষ্ট হবে। এই যে মানুষের বিশ্বাস, এটাকে ঠিক করতে সময় লাগবে। বর্তমান সরকার যেভাবে সহায়তা দিচ্ছে এবং সুন্দর নীতি–পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে শিগগিরই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

আবদুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের মূল শক্তি আমানতকারী। যদি তাঁরা টাকা না রাখেন, তাহলে ব্যাংক শেষ। তাহলে তো ঋণও দেওয়া যাবে না। ব্যাংক তাহলে বাঁচবে কীভাবে? আমরা পরিচালনা পর্ষদে বসতে পারি। কিন্তু আমাদের আর কত টাকা আছে!’

এভাবে ব্যাংক টেকাতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসেরই সমাধান আছে। ওই সমাধানটাই বের করার চেষ্টা করছি। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করতে পারি। তবে এখন ভালো নীতি-পদক্ষেপ পাব। ব্যাংক খাতের ভালোর জন্য আমরা যেভাবে অনুরোধ করছি, সরকার তাতে সহযোগিতা করছে।’

‘যারা ভালো আছি তো আছি, যারা ভালো নেই তাদের বাঁচাতে হবে’—কিছু ব্যাংকের উদ্দেশে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেন আবদুল হাই সরকার। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা দিয়ে অন্য ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো সম্ভব নয়। আমরা বলেছি, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশন, আইএমএফ, এডিবি—এসব সংস্থাকে যদি প্যাকেজ দেওয়া যায়, তাহলে এসব ব্যাংককে বাঁচানোর ভালো মাধ্যম হতে পারে।’