বিএবিতে নতুন নেতৃত্ব আসছে ১৭ বছর পর
সংগঠনটি গত ১৫ বছরে ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তুলেছে। এ অর্থ ব্যবহারের নিরপেক্ষ নিরীক্ষা চেয়েছেন কেউ কেউ।
বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসে (বিএবি) ১৭ বছর পর নতুন নেতৃত্ব আসছে। সংগঠনটির সর্বশেষ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে টানা ক্ষমতায় ছিলেন। যদিও বিএবির সংঘ স্মারক অনুযায়ী, এক কমিটির মেয়াদ তিন বছর। ১৯৯৩ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর চেয়ারম্যান পদে একজন টানা পাঁচ বছর ছিলেন।
সরকার পরিবর্তনের পর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বিএবির চেয়ারম্যান পদও হারান তিনি। পাশাপাশি বিএবির দুই ভাইস চেয়ারম্যানসহ কমিটির একাধিক সদস্য ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছেন। এ কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু। তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ভাই। অপর ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই। তাঁদেরও নিজ নিজ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে বিএবি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার সাধারণ সভা ডেকেছে বিএবি। যদিও সরকার পরিবর্তনের কারণে অনেক ব্যাংকের চেয়ারম্যান দেশছাড়া, কেউ কেউ আছেন আত্মগোপনে। আজকের সভায় সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। আগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পোশাক খাতের নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গত ১৫ বছরে ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা তুলে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়ার কারণে তিনি আলোচনায় ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো এবং নীতি পরিবর্তনেও ভূমিকা রেখে আসছিলেন তিনি।
সর্বশেষ বিএবি ‘শেখ হাসিনা আন্তব্যাংক ফুটবল টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করে। এ জন্য ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা তোলা হয়। এভাবে বিএবি গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তুলেছে বলে জানান ব্যাংকাররা। এসব অর্থের সদ্ব্যবহার হয়েছে কি না, তার ওপর নিরপেক্ষ নিরীক্ষা চেয়েছেন একাধিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তাঁদের আশা, নতুন নেতৃত্ব তা করবেন।
দুটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শীত কিংবা গরম, ঝড় বা বৃষ্টি যেকোনো ইস্যু পেলেই ব্যাংক থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে। এতে ব্যাংকের সিএসআর তহবিল কার্যত শূন্য হয়ে পড়েছে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে চাপ দিত ও ভয় দেখাত।
জানা গেছে, ব্যাংক থেকে ব্যাপক হারে চাঁদা তোলার কারণে ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেক ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ করে দেয়। অনেক ব্যাংক হাসপাতাল ও শিক্ষা কার্যক্রমে খরচ কমাতে বাধ্য হয়।
আরেকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, বিএবি চাঁদা আদায়ের সংগঠন হতে পারে না। এসব বন্ধ করতে হবে। এ সংগঠনকে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ জন্য আর্থিক খাত নিয়ে যাঁদের জানাশোনা আছে, তাঁদেরই নেতৃত্ব আসা প্রয়োজন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, বিএবিকে চাঁদা আদায় থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ সংগঠন ব্যাংকারদের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রয়োজনে ছোট আকারে সিএসআর করতে পারে। তবে এ জন্য জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা যাবে না।