সকাল ৯টায় শুরু ব্যাংকের কার্যক্রম, ভালো-মন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ব্যাংকিং লেনদেনের সময় এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে আজ থেকে। প্রথম দিন শুরুতে লেনদেন তুলনামূলক কম হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে এক ঘণ্টা এগিয়ে এনে সকাল ৯টা থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বুধবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

আজ সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে রাজধানীর শ্যামলী, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডির বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ঘুরে দেখা গেছে, এসব ব্যাংক সকাল ৯টার মধ্যেই গ্রাহকদের লেনদেনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের মূল শাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাও ৯টার মধ্যে খুলতে দেখা গেছে।

অধিকাংশ ব্যাংকেই সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কোনো কোনো ব্যাংকে কিছু কর্মকর্তার আসতে দেরি হয়েছে। আজ কার্যক্রম শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অন্যদিনের তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা অনেক কম ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এক্সিম ব্যাংকের রিং রোড শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দুইজন গ্রাহক ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন। ওই ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সকাল ৯টার পর থেকে আধা ঘণ্টায় পাঁচ-ছয়জন গ্রাহক এসেছেন। কম গ্রাহক উপস্থিতির একই দৃশ্য দেখা গেছে রিংরোড এলাকার ন্যাশনাল ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের রিং রোড শাখার ব্যবস্থাপক মো. ফারুক বলেন, আজ তো নতুন ব্যাংকিং সময়ের প্রথম দিন। এ জন্য হয়তো গ্রাহক উপস্থিতি কিছুটা কম। কিছু দিন গেলে গ্রাহক উপস্থিতির বিষয়টা ভালোভাবে বোঝা যাবে।

গত সোমবার এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আজ বুধবার থেকে ব্যাংকে লেনদেন হবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। আর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অফিস সময় হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

নতুন সিদ্ধান্তের আগে, অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ সময় ব্যাংক খোলা থাকত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সেই হিসেবে ব্যাংকের কর্মঘণ্টা ও লেনদেন ঘণ্টায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু সময়সূচি এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, লেনদেন–পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করে ব্যাংকের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিকেল ৫টার মধ্যে অফিস ত্যাগ করতে হবে। তবে সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও বুথ সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। এসব এলাকার ব্যাংক শাখা, উপশাখা ও বুথের সময়সূচিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

এদিকে, ব্যাংকিং সময় এগিয়ে আনা নিয়ে ভালো-মন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মী ও গ্রাহকেরা।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং সময় এগিয়ে এনে খুব একটা লাভবান হওয়া যাবে না। বরং সময় এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনে প্রভাব পড়েছে।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ব্যাংক খোলার জন্য এখন আমাদের সাড়ে আটটার মধ্যে চলে আসতে হয়েছে। আবার ক্লোজিং শেষ না করে তো বন্ধ করা যাবে না। তাহলে মোট সময় তো একই থাকছে। আবার ব্যাংক আগে খুললেও মার্কেটসহ ব্যবসার কার্যক্রম কিন্তু ১০টার দিকেই শুরু হচ্ছে৷ ফলে তাঁদের লেনদেনও আগের সময় ধরেই হবে। শুধু ব্যক্তিপর্যায়ের গ্রাহকেরা চাইলে একটু আগে আসতে পারবেন।’

শ্যামলী এলাকার আরেকটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন বাসার সব কাজ এগিয়ে আনতে হয়েছে। গৃহকর্মীকে এক ঘণ্টা আগে আসতে বলেছি। আগে সকালে ফজরের নামাজ পড়ে একটু ঘুমাতাম। এখন আর সেটি করা সম্ভব হবে না।’

মোহাম্মদপুর এলাকায় ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কর্মী খাদিজা বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভালোই হয়েছে। এতে আগে আগে ফিরতে পারব। বিকেলে একটু সময়ও পাব।’

তবে গ্রাহকেরা এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। সোনালী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট শাখায় টাকা জমা দিতে এসেছেন একই এলাকার বাসিন্দা তহমিনা পারভীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য সময়ে স্কুল ছুটির পর ছেলেকে সঙ্গে করেই ব্যাংকে আসতে হতো। তবে আজকে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে এখানে সাড়ে নয়টায় এসেছি। এখন ব্যাংকের কাজ শেষ করে ছেলেকে নিয়ে একবারে বাসায় ফিরতে পারব।’