সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা
ব্যাংকে টাকার সংকট হলে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কোনো তারল্যসংকট নেই। বর্তমানে ব্যাংকব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকারদের গভর্নর বললেন
বিভিন্ন ব্যাংক ফল আমদানিতে কম দামে ঋণপত্র খুলছে।
যাচাই–বাছাই করে ঋণপত্র খুলতে হবে
ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট শাখার এডি লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে কোনো আমানতকারী যাতে খালি হাতে ফিরে না যান, সে জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এ–ও জানিয়ে দিয়েছে, কোনো ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংককে সহায়তা দেবে।
দেশের ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে গতকাল সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সচেতনতা অনুষ্ঠানে এই বার্তা দেওয়া হয়। এসএমই খাতের ঋণ বিতরণ, ঋণ নিশ্চয়তা কর্মসূচি বা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম নিয়ে আয়োজিত সচেতনতা অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ তিন ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকের পর গতকাল বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ব্যাংকের আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কোনো ব্যাংকে তারল্যসংকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরসন করবে। ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে সব ব্যাংকের এমডিদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কোনো তারল্যসংকট নেই। বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য রেপো ও তারল্য সহায়তা নীতি চালু আছে। এ ছাড়া ব্যাংকের পরিদর্শন ও তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। ব্যাংকে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। আমানত নিয়ে জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই ঘটেনি।
এর আগে গত রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সংকট নেই। ব্যাংকে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করা হয়।
অর্থ পাচার হলে লাইসেন্স বাতিল
ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত গতকালের সচেতনতা অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে ফল আমদানিতে কম দামে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। আবার গাড়ি আমদানিতেও কম খরচের ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশে অর্থ চলে যাচ্ছে। আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই ব্যাংক শাখাকে দাম যাচাই–বাছাই করে ঋণপত্র খুলতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে শাখার বৈদেশিক মুদ্রার লাইসেন্স (এডি) বাতিল করা হবে। শাখা ব্যবস্থাপককে চাকরিচ্যুত করা হবে। এমডিরাও শাস্তির আওতায় আসবেন।
এ অনুষ্ঠানে এমডিদের আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ যেহেতু ঋণ দিচ্ছে, তাই ব্যাংকগুলো অন্য সংস্থা থেকে ঋণের চেষ্টা করতে পারে। আর ডলার–সংকট আগামী জানুয়ারির মধ্যে সহনীয় হয়ে আসবে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত অক্টোবরে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা কমে নেমে এসেছে ৪৭৪ কোটি ডলারে। ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এখন ব্যাংকগুলো রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বিবেচনায় নিয়ে ঋণপত্র খুলছে ও তা ভবিষ্যতেও খুলে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে আন্ডার ইনভয়েসিং (কম দাম দেখিয়ে রপ্তানি) এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের (বেশি দাম দেখিয়ে আমদানি) অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক সরোয়ার হোসেন বলেন, তদারকির ফলে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা অনেক কমে এসেছে। এখন যে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে, তার দায় পরিশোধের সময় রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে সংকট কেটে যাবে। তখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো বিদেশি ঋণ খেলাপি হয়নি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা হতে দেবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাবে। এ ছাড়া জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানিতে সরকারি ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের জোগান অব্যাহত রাখবে।
গুজব প্রতিরোধে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ
ব্যাংক খাত নিয়ে যেকোনো গুজব প্রতিরোধে ব্যাংকের এমডিদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক নানা খবর প্রচারিত হচ্ছে।
আর গতকালের সচেতনতা অনুষ্ঠানে ব্যাংকের এমডিদের জানানো হয়, আগামী বছরের জুনের মধ্যে এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হবে। যে ব্যাংক পারবে না, ওই ব্যাংক এমডির পুনর্নিয়োগের সময় বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিবেচনায় নেবে।