এবার পাওনা আদায়ে রন হক শিকদারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিলামে তুলছে জনতা ব্যাংক

রন হক সিকদার

রন হক শিকদারের মালিকানাধীন পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডের প্রায় ৮৪৩ কোটি টাকা ঋণ আদায়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জনতা ব্যাংক। আজ প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এই নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের ঋণ হিসাবে মোট ৮৪২ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ৯০২ টাকা পাওনা আছে জনতা ব্যাংকের। এই টাকা, হালনাগাদ সুদ ও অন্যান্য খরচ আদায়ের লক্ষ্যে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩–এর ১২ (৩) ধারা অনুযায়ী সম্পত্তি নিলাম বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

২৯ জানুয়ারি বেলা তিনটার মধ্যে জনতা ব্যাংক পিএলসি, জনতা ভবন করপোরেট শাখা, ১১০ মতিঝিলে বা/এ, ঢাকায় অথবা প্রধান কার্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ এস্টেট ডিপার্টমেন্টে রক্ষিত টেন্ডার বাক্সে আগ্রহী ক্রেতাদের সাদা কাগজে সিলমোহর করা খামে দরপত্র জমা দিতে হবে। সেদিন বেলা তিনটার পর টেন্ডার বাক্সে প্রাপ্ত দরপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট দরপত্রদাতাদের সামনে (যদি কেউ উপস্থিত থাকে) খোলা হবে। এর আগে কোনো আগ্রহী নিলাম ক্রেতা তফসিলভুক্ত জমি, অবকাঠামো, মজুত মালামাল পরিদর্শনে আগ্রহী হলে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার ব্যবস্থা করবে।

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সিকদার পরিবারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অনেক দিন ধরেই। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ন্যাশনাল ব্যাংক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। ২০০৯ সালে যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি টাকার কম, সিকদার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় তা বেড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়।

গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পাঁচটি ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণই ছিল সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ হিসাবে, ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ২৯ শতাংশই খেলাপি। গত দুই বছরে তাদের নিট লোকসান ৪ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে গত তিন বছর যাবৎ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ এই ব্যাংকের পরিস্থিতি এতই নাজুক ছিল যে আওয়ামী লীগের শাসনামলেই এই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জনতা ব্যাংক এস আলম গ্রুপের দুই কোম্পানি এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের পৌনে চার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। যদিও এস আলম গ্রুপ বলেছে, দুই কোম্পানির সম্পত্তি নিলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে তারা।