ডলার হিসাবের সুদের সীমা তুলে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক, কমতে পারে সুদহার

মার্কিন ডলারছবি: সংগৃহীত

বিদেশফেরত বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রা বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের সুদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক আদেশে আরএফসিডি হিসাবের সুদের এই সীমা তুলে নেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ যাওয়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় নগদ ডলারের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। আবার ব্যাংকগুলো বেশি সুদ দিয়ে যে ডলার সংগ্রহ করছে, তা ব্যবহার করতে পারছে না। এতে অনেক ব্যাংক বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে আরএফসিডি হিসাবে লোকসান দিচ্ছে। এ কারণে সুদহার বেঁধে দেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছর দেশে তীব্র ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা ব্যাংকে ফিরিয়ে আনতে গত ডিসেম্বরে আরএফসিডি হিসাবের ওপর বাড়তি সুদসহ নানা সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংকগুলো ডলার হিসাবের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। কিন্তু বেশি সুদ দিয়ে পাওয়া নগদ ডলার ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পারছে না। আবার উল্টো সুদ দিতে হচ্ছে। ফলে অনেক ব্যাংক লোকসানের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের আরএফসিডি হিসাবে বর্তমানে ৫ কোটি ডলারের বেশি জমা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরা এই হিসাবের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এতে আরএফসিডি হিসাবের সুদহার কমতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ–ও বলছেন, আগের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে নগদ ডলার সংগ্রহ করেছে।

গত ৩ ডিসেম্বর এ–সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে বলা হয়েছিল, মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে আরএফসিডি হিসাবে জমা করলে বাড়তি সুদসহ বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। এরপরই বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে নগদ ডলারের হিসাব খোলা শুরু করে।

এসব ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগদ ডলার জমা হয়েছে সিটি ব্যাংকের আরএফসিডি হিসাবে। জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের ব্যাংকগুলোর হাতে সব মিলিয়ে যখন ৮০ থেকে ৯০ লাখ ডলারের সমমূল্যের নগদ ডলার জমা ছিল, তখন সাড়ে ৬ শতাংশ সুদ দেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। এখন ব্যাংকে ৭ কোটির ডলারের সমমূল্যের নগদ ডলার রয়েছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকেই ২ কোটি ২০ লাখ ডলার জমা আছে। বর্তমানে দেশের বাইরে ভ্রমণ কমে যাওয়ায় নগদ ডলারের চাহিদাও কমে গেছে। সবকিছু এখন বাজারভিত্তিক হচ্ছে, তাই আরএফসিডির সুদও একইভাবে হওয়া উচিত।’

সাধারণত বিদেশফেরত ১৮ বছরের বেশি যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকে গিয়ে আরএফসিডি হিসাব খুলতে পারেন। বিদেশে গেছেন, তার প্রমাণপত্র অর্থাৎ পাসপোর্ট ও ভিসার নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে এই হিসাব খোলা যায়। এ ধরনের হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কোনো চেক বই না দিয়ে ডেবিট কার্ড দেয়, যা থেকে খরচে কোনো অনুমোদন লাগে না।