ঋণসীমা বাড়ানোর পর বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে ছাড়

চীনে তৈরি বিওয়াইডি ইলেকট্রিক গাড়িরয়টার্সের ফাইল ছবি।

এখন থেকে ঋণপত্র খোলার জন্য অর্থ জমা না নিয়েই ব্যাংক চাইলে গ্রাহককে ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানির সুবিধা দিতে পারবে। জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিবেচনায় এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া ডলার–সংকটের কারণে গাড়ি আমদানিতে শতভাগ টাকা জমা করে (মার্জিন) ঋণপত্র খোলার বিধান জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই কড়াকড়িও শিথিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণপত্র খুলতে বলা হয়েছে। এর আগে আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি কেনায় ঋণসীমা ও ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শতভাগের বেশি টাকা জমা দিয়ে গাড়ি আমদানি করতে হচ্ছিল। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ার কারণে গাড়ির দামও ক্রমেই বাড়ছিল। মার্জিনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শিথিল করায় এখন গাড়ি আমদানির আগেই পুরো টাকা জমা দিতে হবে না। ডলারের দাম আরও না বাড়লে এই সুবিধার ফলে দেশে গাড়ির দাম কমে আসতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে অন্য কতিপয় পণ্যসহ মোটরকারের (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি) আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিবেচনায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ির ব্যবহারকে নীতিগতভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে এ ধরনের পরিবহনমাধ্যম কার্বণ নিঃসরণ হ্রাস এবং বায়ুর গুণমান সূচক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই বিবেচনায় সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড মোটরকারের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। তবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড মোটরকার ব্যতীত অন্যান্য মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি) আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০ ভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায়। আগে একটি গাড়ি কিনতে ব্যাংক সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারত। ওই সীমা বাড়িয়ে ৬০ লাখ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি গাড়ির দামের কত শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে, সেই হারও বাড়ানো হয়েছে। আগে গাড়ির দামের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত ব্যাংকগুলো। এখন দিতে পারবে দামের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য দামের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বাকি টাকার জোগান ক্রেতাকেই দিতে হবে।

বারভিডা সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি আমদানি সহজ করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিদ্যমান কড়াকড়ি শিথিল করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল।পরিবেশদূষণ কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব গাড়ি ব্যবহারকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়ার পরও কর ও নিবন্ধন খরচ বেশি হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি এখনো বাড়েনি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ১৫০ কিলোওয়াটের বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন করতে মিতসুবিশি পাজেরো বা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের মতো বিলাসবহুল তেলের গাড়ির সমান ফি ধার্য করেছে। যাঁদের একটি গাড়ি আছে, তাঁরা দ্বিতীয় গাড়ি হিসেবে বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলেও এর জন্য বার্ষিক এক লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হচ্ছে।