ঋণ আদায়ে ভিন্নধর্মী চেষ্টা ন্যাশনাল ব্যাংকের, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যাংকারদের কর্মসূচি

ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামের দুই প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের কুলগাঁও এলাকায় শিল্পগোষ্ঠী সাদ-মুসা গ্রুপের বাণিজ্যিক কার্যালয়ের সামনেছবি: কর্মকর্তাদের সৌজন্যে

ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামের দুই প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর কুলগাঁও এলাকায় শিল্পগোষ্ঠী সাদ-মুসা গ্রুপের বাণিজ্যিক কার্যালয় ও খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। এই দুই গ্রুপের আওতাধীন ছয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বেশি ঋণ অনাদায়ি রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ ও খাতুনগঞ্জ শাখা। এসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে।

চট্টগ্রামের বায়েজিদ কুলগাঁও এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে সাদ–মুসা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। সেখানে ‘ঋণ আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি’ ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেন তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাদ–মুসা গ্রুপের কাছে ব্যাংকের ১ হাজার ১৮০ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। একই সময়ে খাতুনগঞ্জ এলাকায় ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের কার্যালয়ের সামনেও অবস্থান নেন ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিএসএম গ্রুপের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কাছে ৪০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, গত সেপ্টেম্বর থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এমন সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটি তারল্যসংকটে পড়েছে। এ কারণে নিয়মিত লেনদেন নিষ্পত্তিসহ নানা ব্যাংকিং কার্যক্রমে সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের লেনদেন স্বাভাবিক করতে ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তাই ব্যাংকটির কর্মকর্তা এই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছেন।

ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামের দুই প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের খাতুনগঞ্জ এলাকায় বিএসএম গ্রুপের কার্যালয়ের সামনে
ছবি: কর্মকর্তাদের সৌজন্যে

ঋণ আদায়ে ব্যাংকটির এই কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএম গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আহমদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রুপটির দুই প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৫৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানি করেছিল। এর মধ্যে সুদসহ মোট ৪৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখন ন্যাশনাল ব্যাংক ৩৯৮ কোটি টাকা পাবে, যার মধ্যে ২৮৬ কোটি টাকা সুদ। আহমদ উল্লাহ আরও বলেন, ‘গত বছর রোজার আগে ন্যাশনাল ব্যাংকের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়া থেকে ২০ হাজার টন ছোলার ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। তবে ব্যাংকটি বিদেশি সরবরাহকারীকে ডলার পরিশোধ করতে না পারায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোলাবাহী জাহাজ ফেরত চলে যায়। এতে আমাদের গ্রুপের কাছে এক মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকটির কারণে সেই ক্ষতির দায় পড়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর।’

ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মুহাম্মদ আবু ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ আদায়ে গ্রুপগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা সাড়া দিচ্ছে না। ঋণ আদায়ে মামলাও করা হয়েছে। এখন এই কর্মসূচির মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে।