আসছে ডিজিটাল ব্যাংক
সহজে ও দ্রুত সেবা দেবে কড়ি
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত মানুষকে এ সেবায় যুক্ত করতে চায়।
দেশের ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত মানুষকে এই সেবার আওতায় আনতে চায় কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে কড়ির ব্যাংকিং সেবার প্রধান মাধ্যম হবে অ্যাপ। এ জন্য কড়ি এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করবে, যার মাধ্যমে গ্রাহকেরা আর্থিক সেবা পাবেন সহজে ও দ্রুত।
পাশাপাশি ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ (এমএফএস) বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেও এই ডিজিটাল ব্যাংকের হিসাবে টাকা জমা ও উত্তোলন করা যাবে। এ জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল এই ব্যাংক। চলতি বছরের মাঝামাঝি কার্যক্রম চালুর আশা করছে কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানিয়েছেন কড়ি ডিজিটাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ এন করিম।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে পড়াশোনা শেষে ১৯৮৫ সালে দেশে ফিরে প্রযুক্তি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯৮৬ সালে গড়ে তোলেন টেকনোহেভেন কোম্পানি। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। টেকনোহেভেন সরকারের ও বিভিন্ন ব্যাংকের নানা প্রযুক্তি সহায়তার পাশাপাশি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করে।
‘হাজার বছর ধরে এই দেশে বিনিময়ের মাধ্যম ছিল কড়ি। তাই আমরা “কড়ি” নামটি বেছে নিয়েছি। কড়ি এখন ডিজিটাল বিনিময় মাধ্যম হিসেবে রূপান্তর হবে।’হাবিবুল্লাহ এন করিম
ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ‘সব সময় আমরা এমন কিছু প্রযুক্তিসেবা দিয়েছি, যা আগে কখনো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়নি। সব সময় আমরা নতুন কিছু করেছি, যা অন্যদের পথ দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার সেবার সঙ্গে যুক্ত। তারই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে এগিয়ে এসেছি। আমরা এমন একটি ডিজিটাল ব্যাংকের মডেল দাঁড় করাতে চাই, যা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।’
কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক নামকরণের প্রসঙ্গে হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ‘হাজার বছর ধরে এই দেশে বিনিময়ের মাধ্যম ছিল কড়ি। তাই আমরা “কড়ি” নামটি বেছে নিয়েছি। কড়ি এখন ডিজিটাল বিনিময় মাধ্যম হিসেবে রূপান্তর হবে।’
কী ধরনের সেবা দেবে কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক—জানতে চাইলে হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ডিজিটাল ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকের মতো সব সেবা দিতে পারবে। কোনো শাখা থাকবে না, বৈদেশিক বাণিজ্য করা যাবে না ও বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে না। এর বাইরে সব সেবাই দেবে কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক। সব ধরনের আমানত সুবিধা ও অতিক্ষুদ্র থেকে ছোট ও মাঝারি ঋণ, প্রবাসী আয় সংগ্রহ, সরকারি-বেসরকারি বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, টাকা স্থানান্তরসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা থাকবে। সব সেবাই মিলবে ডিজিটাল মাধ্যমে। এ জন্য ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি দিয়ে তাৎক্ষণিক হিসাব খোলা যাবে ডিজিটাল মাধ্যমে।
এখন ব্যাংক ও এমএফএসে যেসব সেবা মিলছে, তার চেয়ে বাড়তি কী সুবিধা থাকবে—এ বিষয়ে হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, এখন এমএফএসের ৯০ শতাংশ লেনদেন হয় টাকা জমা ও উত্তোলনে। কড়ি ডিজিটাল ব্যাংকে গ্রাহকেরা সব লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে পারবেন। এমন ব্যবস্থা তৈরি করা হবে, কেউ আর নগদ টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন মনে করবেন না।
হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ‘এখন সাধারণ মানুষের জন্য সব লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে করা কষ্টসাধ্য। আমরা সেবা এমনভাবে দেব, যাতে সেবাটি সহজ ও দ্রুত করা যায়। এখন কেনাকাটায় নগদ লেনদেনে যে সময় প্রয়োজন হয়, তার থেকে কম সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে।’
অন্য ব্যাংক ও এমএফএসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ‘তারা কেউ আমাদের প্রতিযোগী নয়। দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত। আবার এক ভাগের সবাই পুরো ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন না। তাঁদের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় আনাটা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’
অবকাঠামোহীন প্রতিষ্ঠানকে মানুষ বিশ্বাস করবে কীভাবে জানতে চাইলে হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ‘লেনদেন এত সহজ ও দ্রুত হবে যে সহজেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারব। এ ছাড়া আমাদের মালিকানার সঙ্গে রয়েছে এসিআই, স্কয়ার, ইস্পাহানি, ট্রান্সকম, প্যারাগন, মোহাম্মদী গ্রুপ।
পাশাপাশি দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ ব্যাংকার, টেলিকম ও প্রযুক্তি খাতের কয়েকজন রয়েছে কড়ির মালিকানায়। আমরা সব ধরনের নিয়মের মধ্যে থেকে সেবা দেব। গ্রাহকদের টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। আশা করছি আমাদের কর্মকাণ্ড মানুষের আস্থা তৈরি করবে।’ তিনি বলেন, ‘সব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের মাঝামাঝি কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেই প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। দেশে আরও কয়েকটি ডিজিটাল ব্যাংক চালু হবে।’
গত বছরের অক্টোবরে দেশে প্রথমবারের মতো দুটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক দুটি হলো নগদ ডিজিটাল ব্যাংক ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক।