বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তিনি এস কে সুর চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও চাওয়া হয়েছে।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের হিসাব তলবের চিঠি আজ সোমবার সব ব্যাংকে পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার এনবিআর চিঠি পাঠিয়েছে।
একই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব চেয়েছেন কর গোয়েন্দারা। অবশ্য তাঁদের আলাদা ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এই হিসাবের তালিকায় সব ধরনের মেয়াদি আমানত, চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্রসহ সব ধরনের হিসাব। শেয়ারবাজারে অর্থাৎ বিও হিসাবে কত টাকা আছে, তাও জানতে চায় এনবিআর। এসব হিসাবের ২০১৩ সালের জুলাই থেকে এই পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হয়েছে। এমনকি আগের ব্যাংক হিসাব কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে, এমন হিসাবের তথ্যও দিতে হবে।
এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ নিয়ে দুর্নীতি চাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
এ ছাড়া পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে দেওয়া এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম চাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমসহ অন্যদের পিপলস লিজিং থেকে সাত বছরে (২০০৯-১৫) সাড়ে ৬ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে ‘কিছু ভিআইপি ব্যক্তির জন্য মূল্যবান গিফট ক্রয়’ করা হয়েছিল বলে নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডে (বিআইএফসি) আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণে ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কমিটি বিআইএফসির পাশাপাশি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের ঘটনাও খতিয়ে দেখবে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। সবার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করা হবে। এই তদন্ত কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেকোনো বিভাগ, কর্মকর্তার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
এই কমিটি ইতিমধ্যে অনুমোদন করেছে গভর্নর ফজলে কবির। ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানের নেতৃত্বে ওই কমিটি তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।