এবার সরিয়ে দেওয়া হলো অগ্রণী ব্যাংকের এক পরিচালককে
রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে মো. ফরজ আলীকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। তাঁর স্থলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার আগে ফরজ আলী জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ছিলেন। দীর্ঘদিন ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের কারণে ব্যাংকসংক্রান্ত নিয়মকানুনগুলো তাঁর জানা ছিল। জানা গেছে, পর্ষদে তিনি ব্যাংকের স্বার্থে সোচ্চার ছিলেন। তাতে ব্যাংকটির প্রভাবশালী একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে। পরিচালক হিসেবে তাঁর মেয়াদ আগামী বছরের ২১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার মনে করেছে তাঁকে প্রয়োজন নাই, এ জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে জানতে পারবেন।’ তবে ঠিক কী কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।
অগ্রণী ব্যাংকে এমন ঘটনা এটি প্রথম নয়। এর আগে ব্যাংকটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক লীলা রশিদকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার প্রমাণ মেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে। পর্যবেক্ষক হিসেবে পর্ষদের একটি সভায় লীলা রশিদ কথা বলার সময় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জায়েদ বখত তাঁকে থামিয়ে দেন। পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। এ বিষয়ে লীলা রশিদ লিখিতভাবে গভর্নরের কাছে অভিযোগ করেন। পরে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে জায়েদ বখত পুনর্নিয়োগ পেলে পর্যবেক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করেন লীলা রশিদ।
জানা যায়, জনতা ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ফরজ আলী। তাঁকে তিন বছরের জন্য পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তবে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে পর্ষদে তাঁর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয় ব্যাংকটির কয়েকজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একটি অংশ।
ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি একটি পোশাক কারখানাকে ঋণ দেওয়া নিয়ে পর্ষদ সভায় দ্বিমত পোষণ করেন ফরজ আলী। প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণের ব্যবস্থা করতে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন ব্যাংকটির প্রভাবশালী একজন গ্রাহক। ফরজ আলীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হন ওই গ্রাহক। পরে তিনি ফরজ আলীর বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার ফরজ আলীকে পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার থেকে যাকে নিয়োগ দেবে, আমাদের তাদের সঙ্গেই কাজ করতে হবে। তবে শুনেছি, কোনো ডিএমডিকে ব্যাংকের পরিচালক পদে রাখা হবে না।’
এর আগে ২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু হলে তা নিয়ে পর্ষদে সোচ্চার ছিলেন ব্যাংকটির সে সময়কার দুই পরিচালক এ কে এম কামরুল ইসলাম ও এ কে এম রেজাউর রহমান। তাই তাঁদের বেসিক ব্যাংক থেকে সরিয়ে জনতা ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালক করা হয়।