শুধু আইন দিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত সম্ভব নয়, দরকার সচেতনতা

ক্যাব ও এফআইভিডিবির সেমিনারে উপস্থিত বক্তাদের একাংশ
সংগৃহীত

দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এ মুহূর্তে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ নিয়ে অনেক আইন হয়েছে, অনেকগুলো সরকারি সংস্থা কাজ করছে, কিন্তু এরপরও ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না। ভোক্তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা সচেতন না হলে শুধু আইন করেও খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করা সম্ভব নয়। ভেজাল রুখতে হলে মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই ভোক্তা। উৎপাদক-ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা—সবার সচেতনতার বিকল্প নেই।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের বাংলাদেশের সভাকক্ষে ‘সরকারি আইন ও প্রবিধান অনুযায়ী নিরাপদ খাদ্যের মান নিশ্চিত প্রাপ্যতা ও ভোক্তা অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ও ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের (এফআইভিডিবি) যৌথ আয়োজনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপদ খাদ্য। আম এনে বলা হচ্ছে ভেজালমুক্ত আম, কিন্তু সেটা আদৌ নির্ভেজাল কি না, তা জানার তেমন সুযোগ নেই। আবার ওমেগা থ্রিযুক্ত বলে সুপার শপে দামি ডিম বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা হিসেবে সেখানে কেউ প্রতারিত হচ্ছে কি না, তা দেখার তেমন সুযোগ নেই। বাজারে অনেক নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন দরকার বলে মনে করেন তিনি।

সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘রেস্তোরাঁগুলোতে কাঁচা ও রান্না করা মাংস একই সঙ্গে রাখা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো মালিকদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। ভাবতে অবাক লাগে, শিশুদের দুধের মতো খাদ্যও ভেজাল হচ্ছে। মানুষ হিসেবে আপনি-আমি সচেতন না হলে অভিযান চালিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একটা সময় খাদ্যসংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এখন খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে, তবে তা নিরাপদ নয়। ভেজালমুক্ত খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, প্রকৃত দেশপ্রেমিক কখনোই খাদ্যপণ্যে ভেজাল দেওয়ার চিন্তা করে না। মানুষ হিসেবে এটা ঠিকও নয়। এরপরও অনেকে তা করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

টেকনিক্যাল সেশনে অংশ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা শেখ মো. ফেরদৌস আরাফাত বলেন, ‘গড়পড়তা সব খাবার অনিরাপদ বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক, দেশে কিছু খাবার বেশি অনিরাপদ হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে শক্তিশালী আইন আছে। আইন প্রয়োগের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, ভোক্তাদের সাহসী হতে হবে। কোনো বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হলে প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযোগ করতে হবে। এভাবে এগিয়ে এলে বাজার ভেজালমুক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অর্থ) জান্নাতুল ফেরদৌসী ভোক্তা অধিকার আইনের আলোকে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির বিষয়ে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশের প্রকল্পপ্রধান মামুনুর রশিদ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, অধিকারকর্মী, ক্যাব ও এফআইভিডিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।