শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের এক-তৃতীয়াংশই বেকার

গবেষণায় শিক্ষিত বেকারদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বেকার স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে। ফাইল ছবি
গবেষণায় শিক্ষিত বেকারদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বেকার স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে। ফাইল ছবি

কমপক্ষে মাধ্যমিক পাস, এমন শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের এক-তৃতীয়াংশই বেকার। তাঁরা কোনো কাজ করেন না কিংবা পড়াশোনাও করেন না। শিক্ষিতদের মধ্যে সার্বিকভাবে ৪৮ শতাংশ পূর্ণকালীন কাজ করেন। ১৮ শতাংশের বেশি খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। আর ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ বেকার। সব মিলিয়ে শিক্ষিতদের ৫৫ শতাংশ বেতনভোগী কর্মজীবী। গ্রামের চেয়ে শহরে বেতনভোগীর সংখ্যা বেশি। সর্বোচ্চ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ চাকরি করেন।

গবেষণায় শিক্ষিত বেকারদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বেকার স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে। প্রায় ৩৭ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৩৪ শতাংশের বেশি বেকার। আর এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৭-২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বেকারত্বের এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব’ শীর্ষক এই গবেষণার ফল বিআইডিএসের দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের একটি অধিবেশনে উপস্থাপন করা হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল রোববার এই সম্মেলন শুরু হয়েছে।

গবেষণাটি করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ, গবেষক তানভীর মাহমুদ ও নাহিয়ান আজাদ। গবেষকেরা দেশের ৬ লাখ ১৮ হাজার ২৬২ জন তরুণ-তরুণীকে ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে গবেষণার প্রশ্ন পাঠান। এর মধ্যে ১৫ হাজার ২৫ জন উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের উত্তরের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে। তাঁরা সবাই স্নাতকোত্তর, স্নাতক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পাস।

>

৬ লাখ ১৮ হাজার ২৬২ জন তরুণ-তরুণীকে ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে গবেষণার প্রশ্ন পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৫ জন উত্তর পাঠিয়েছেন।

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনের সময় বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ বলেন, মূলত পছন্দমতো চাকরি না পাওয়ায় শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি।

তাহলে পছন্দমতো চাকরির জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে হয়, সেটাও গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণা অনুযায়ী, নিজেদের পড়াশোনা শেষ করার পর ছয় মাসের মধ্যে অর্ধেক তরুণ চাকরি পেয়ে যান। ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ৩০ শতাংশকে। আর দুই বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় ১৮ শতাংশ তরুণকে।

গতকাল বিকেলের ওই অধিবেশনে দারিদ্র্য বিমোচন এবং নগরে কর্মসংস্থান নিয়ে আরও তিনটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে উপস্থাপনায় বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় যেসব ভাতা দেওয়া হয়, তা অপর্যাপ্ত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতা যখন দেওয়া শুরু হয়, তখন থেকে পরের ১০-১২ বছর পর্যন্ত ওই প্রবীণ ব্যক্তি টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে তাঁর দারিদ্র্য বিমোচন হয় না। তাই যদি পরিমাণ বাড়িয়ে একসঙ্গে টাকা দেওয়া হয়, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজে লাগবে। এসব কর্মসূচিতে একা বড় ‘ধাক্কা’ দেওয়া প্রয়োজন।

এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ টি এম নুরুল আমিন। বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী প্রমুখ।

পোশাক কারখানা আগের চেয়ে নিরাপদ

দিনের আরেক অধিবেশনে তৈরি পোশাকশিল্পে কমপ্লায়েন্সের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষক মনজুর হোসেন, কাজী ইকবাল ও তাহরিন তাহরিমা চৌধুরী। এই গবেষণায় বলা হয়, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর তৈরি পোশাক খাতে নিরাপত্তার ইস্যুটি সামনে চলে আসে। নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের জন্য ক্রেতাদের চাপে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়।

একই অধিবেশনে বিআইডিএসের ওষুধশিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষক নাজনীন আহমেদ। এতে তিনি বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা অনেক চিকিৎসককে উপঢৌকন দেন। যেমন বিদেশে সেমিনারে গেলে পরিবারসহ ঘুরে আসার ব্যবস্থা করে দেন তাঁরা। আবার অনেক সময় পরিবারসহ অবকাশ যাপনের ব্যবস্থাও করা হয়। এ ছাড়া অনেক চিকিৎসককে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেন তাঁরা। এসব তথ্য পাওয়া গেছে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে কথা বলে।