বন্দর নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে থাকলে চলবে না
এ বছর বিশ্বে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। তাতে দেশে আমদানিনির্ভর শিল্পকারখানার কাঁচামাল জোগাড় করে উৎপাদন চালু রাখতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। শুধু জাহাজভাড়া ও পণ্যের দামই বাড়েনি, সময়মতো পণ্য হাতে পাওয়া যায়নি। সহজলভ্য কাঁচামালও সংগ্রহ করতে উদ্যোক্তাদের বেগ পেতে হয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় এমনটি হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রভাবে আমাদের ভুগতে হয়েছে। সেই প্রভাব কেমন, তা আমদানি ব্যয়ের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়েনি, এমন পণ্যের সংখ্যা এ বছর ছিল খুবই নগণ্য। গড়ে পণ্য আমদানি মূল্য বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দিন শেষে ভোক্তাদের ভুগতে হয়েছে।
করোনার সময় বিশ্বব্যাপী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো অবস্থানে ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফাও করেছে বেশি। এর বিপরীতে ভোক্তাদের খরচ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। জাহাজভাড়া এখনো হাতের নাগালে আসেনি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি রয়ে গেছে। ফলে আগামী দিনেও এ দেশের ভোক্তাদের জন্য সুখবর নেই।
বিশ্বের বন্দরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, চট্টগ্রাম বন্দরে বছরের শেষার্ধে কোনো জাহাজজট ছিল না। জট ছিল না বলে আমাদের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, পণ্য পরিবহনের চাপ বাড়লে বন্দর তা সামাল দিতে পারবে না। বন্দরের সক্ষমতা এখনো খুব বেশি নয়।
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দেশে উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। ২০৩০ সালকে যদি মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে বন্দরের সক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে পাঁচ গুণ বাড়াতে হবে। নতুন নতুন বন্দর করতে হবে। এখন পতেঙ্গা টার্মিনাল হচ্ছে। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। অথচ বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। বন্দরকেন্দ্রিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে দেরি করলে আগামী দিনে তার মাশুল দিতে হবে।
বিষয়টা ব্যাখ্যা করি। অর্থনৈতিক অঞ্চলে সবে কারখানা স্থাপন শুরু হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল কয়েক বছরের মধ্যে পুরোদমে চালু হবে। পদ্মা সেতুসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণ শেষে বেসরকারি খাতে আরও উৎপাদনমুখী কারখানা হবে। অর্থাৎ এক-দুই বছর পর দেখা যাবে, শিল্পকারখানায় উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে। তখন যদি বন্দরের পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা না বাড়ে, তাহলে সামাল দেওয়া যাবে না। তাই দেশের স্বার্থে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।