২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি বাংলাদেশ আয়োজিত অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান। ব্যাংকটি তার কর্মীদের অনুপ্রেরণা জোগাতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে
ছবি: এইচএসবিসির সৌজন্যে

পেশাজীবনে সাফল্য পেতে হলে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই।

দেশের নারী-পুরুষনির্বিশেষে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সিমিন রহমান। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘সিমিন রহমানের সঙ্গে কথোপকথন’ নামে অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কর্মরত এইচএসবিসির কর্মীদের অনুপ্রেরণার দেওয়ার জন্য এই আয়োজন করা হয়।

অনলাইন আলোচনায় নারী হিসেবে ব্যবসাজগতে চলার পথ, ব্যবসায় নেতৃত্ব, অনুপ্রেরণা, তরুণ প্রজন্মের প্রতি পরামর্শসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সিমিন রহমান। এসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব উর রহমান। অনেকটা কথোপকথনের ঢঙে চলে আলোচনা।

আলোচনার শুরুতেই সিমিন রহমানের ব্যবসার জগতে চলার পথ সম্পর্কে জানতে চান মাহবুব উর রহমান। জবাবে সিমিন রহমান বলেন, ‘আমার বাবা লতিফুর রহমান খুব স্বাপ্নিক মানুষ ছিলেন। তিনি একটি স্বপ্ন নিয়ে ট্রান্সকম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। আমি ট্রান্সকম গ্রুপের একদম সাধারণ পর্যায় থেকে কাজ শুরু করি। ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশনের ওয়্যারহাউসে প্রথমে আমাকে কাজ করতে হয়েছে। ধীরে ধীরে নানা পর্যায় পার হয়ে এখন আমি ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছি। তবে ট্রান্সকমের ব্যবসায় যোগ দিতে হবে, বাবার দিক থেকে এমন বাধ্যবাধকতা ছিল না। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলে।’

চলার পথে চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিমিন রহমান বলেন, ‘আমরা দেখি, নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ থাকে। আমি পরিবার ও পেশা—দুটোকেই প্রাধান্য দিয়েছি। একজন নারীকে ৩৬০ ডিগ্রি ভূমিকা পালন করতে হয়। একজন নারী একদিকে কর্মজীবীর ভূমিকা পালন করেন। আবার ওই নারীকে একজন মা, কন্যা, স্ত্রীর দায়িত্বও পালন করতে হয়। যেসব নারী জীবনে সফল হয়েছেন, তাঁদের জীবনগাথা পড়েছি। তাঁদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি।’

পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে সিমিন রহমান বলেন, যেকোনো নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। নারী-পুরুষনির্বিশেষে পরিবারের সদস্যদের এই সহায়তা দিতে হয়। এই বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেরা যখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরত, তাদের যত্ন নিতেন আমার মা। মা এভাবেই আমাকে সহায়তা করেছেন। মায়ের এমন ভূমিকা থাকা যেকোনো নারীকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।’

এসকেএফের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব গ্রহণের অভিজ্ঞতার কথাও বলেন সিমিন রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন। ফার্মাসিউটিক্যালসের ওপর আমার পড়াশোনা ছিল না। আমি বাবাকে বলেছিলাম, “আব্বু, ওষুধ খাতটি খুবই কারিগরি বিষয় (টেকনিক্যাল)।” তখন বাবা বলেছেন, “ব্যবসা তো ব্যবসাই। সেটা কোন খাতের ব্যবসা, তা বড় কথা নয়।” এসকেএফের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব আমার জন্য ছিল অনেকটা অ্যাসিড টেস্টের মতো (পরীক্ষার মতো)। যেকোনো ক্ষেত্রে একজন নারীকে সাফল্য পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমই যেকোনো ফোরামে নারীর কণ্ঠস্বরকে বাড়িয়ে দেবে। অবশ্য এটি বেশ কঠিন কাজ। কোনো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকলে নারী শুধু কর্তৃত্বপরায়ণ হবেন, তা নয়। তাঁকে কর্মীদের কথাও শুনতে হবে। তারপর সবচেয়ে উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

কথোপকথনের একপর্যায়ে সিমিন রহমানের কাছে এইচএসবিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানতে চান, তরুণ প্রজন্মের প্রতি কী পরামর্শ দেবেন? জবাবে সিমিন রহমান বলেন, ‘প্রত্যেককেই বিশ্বাস রাখতে হবে, সে যা হতে চায়, তা হতে পারবে। আমার মা বলতেন, “নিজেকে প্রমাণের জন্য তোমাকে যেকোনো পুরুষমানুষের চেয়ে দশ গুণ বেশি পরিশ্রম করতে হবে।” আজ ট্রান্সকম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মী কাজ করেন। তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে এসেছেন। তাঁরা সবাই মেধাবী।’ সিমিন রহমান আরও বলেন, ‘আমার বাবা ব্যবসায় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি আমাদের সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। বিশ্বমানের মেধা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে হবে। সেই মেধার অধিকারী নারী না পুরুষ, বড় কথা নয়।’

মাহবুব উর রহমান প্রশ্ন করেন, প্রতিদিন আপনি কীভাবে অনুপ্রেরণা পান? সিমিন রহমানের সোজা উত্তর, ‘আমার বাবা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। ট্রান্সকম গ্রুপ শুধু একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি চলে ব্যবসায় মূল্যবোধ ও সততা দিয়ে।’

গতকালের এ অনলাইন আলোচনায় এইচএসবিসি বাংলাদেশের ৪৫০ জনের বেশি কর্মী শ্রোতা ছিলেন। এ ছাড়া ট্রান্সক্রম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরাও অংশ নেন। আলোচনাকালে শ্রোতাদের একজন খুদে বার্তায় সিমিন রহমানকে প্রশ্ন করেন, তরুণদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী? উত্তরে সিমিন রহমান বলেন, প্রতিমুহূর্তে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সফলতা আসবেই।