>করোনার আর্থিক ক্ষতি কাটাতে এরই মধ্যে লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। তাতে গতি ফিরবে কি অর্থনীতিতে? করণীয়ই–বা কী? এসব নিয়ে কথা বলেছেন উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
মহামারি রাষ্ট্র ও অর্থনীতিকে একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের আগে থেকেই অর্থনীতিতে অনেক নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। যেমন কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য কমার প্রবণতা হ্রাস, শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি, আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা। সার্বিকভাবে অর্থনীতির সব সূচক পড়তির দিকে ছিল। করোনা এসে সেই অর্থনীতিকে দুর্বলথেকে দুর্বলতর করেছে। অভিঘাতের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
করোনা মহামারি বাংলাদেশের অর্থনীতির কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ। এসব মানুষের জন্য রাষ্ট্র জীবনচক্রভিত্তিক কোনো সামাজিক সুরক্ষা তৈরি করতে পারেনি। তাদের জন্য পর্যাপ্ত ভাতা নেই। যা আছে, তা মৌসুমভিত্তিক। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে বসে আছে। চারদিকে মানুষের হাহাকার শুনছি। তাই দেশের মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা যেমন দরকার, তেমনি একটি আপৎকালীন সর্বজনীন আয় সহায়তাও দরকার। এই আর্থিক সহায়তা অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেলে দেওয়া উচিত। কেননা নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ২ কোটি ৫ লাখ লোকের ব্যাংক হিসাব আছে। তাই শুধু হতদরিদ্র নয়; নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের এই সহায়তা দেওয়া উচিত।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙিন অবস্থা লক্ষ করা গেছে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা দেখিয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে কেন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রাধান্য থাকা উচিত। নিবিড় পরিচর্যার জন্য আইসিইউর অপ্রতুলতা একটি বড় উদাহরণ। এখন স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ শতাংশের কম খরচ হয়। একটি সর্বজনীন জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তত জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত।
করোনা–পরিস্থিতির কারণে দেখা গেল, কৃষি খাতেও সমন্বয়হীনতা আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে। সেটা নির্ভর করছে তেলের দাম কমে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কেমন থাকবে, এর ওপর। মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তিন বছর মেয়াদি পুনর্গঠন পরিকল্পনা করা উচিত। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় বাজেট দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, করোনার শিক্ষা থেকে পাঁচটি খাতকে বাজেটে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। এগুলো হলো স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি, শিক্ষা ও শিল্প বহুমুখীকরণ।