প্রকল্পটি নতুন করে সাজানো যেতে পারে
চীনের কনসেশনাল (নমনীয় সুদ) ঋণ নেওয়া এবং সেই ঋণে গৃহীত প্রকল্পের কাজ চীনের মনোনীত ঠিকাদারকে দিয়ে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে (জিটুজি নামে) করানোর এক অদ্ভুত সংস্কৃতি বাসা বেঁধেছে আমাদের দেশে। যার একটি বড় উদাহরণ এ প্রকল্প। চীনের ঋণ নেওয়ার মানে হচ্ছে, ঠিকাদার আগে থেকেই ঠিক করে রাখা। এ কারণে দর-কষাকষিও আর শক্তভাবে করা যায় না, তখন তা হয়ে ওঠে লোকদেখানো দর-কষাকষি।
এ মনোনয়নের বিষয়টি একক প্রতিষ্ঠানকে জিটুজির নামে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে কাজ দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে চীনারা প্রস্তাব করে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। দর-কষাকষি করে চুক্তি হয় তিন হাজার কোটি টাকায়, অর্থাৎ দুই হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে দেশের ওপর কড়া সুদের অযৌক্তিক ঋণের চাপ সৃষ্টি হয়। বিস্তৃতি ঘটে দুর্নীতির। জিটুজির সুযোগ ব্যবহার করেই চীনা প্রতিষ্ঠান প্রকৃত ব্যয়ের অনেক বেশি প্রস্তাব করেছে বলে মনে হচ্ছে। বিআরটিসি বুয়েটের মূল্যায়নটি সরকার কেন আমলে নিল না, তা-ও এক রহস্য বটে।
আমরা জানি, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। এটি যেন মায়ের জন্মের আগেই মায়ের কাল্পনিক মেয়ের বিয়ের আয়োজন। প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন, বরাদ্দ আদেশ জারি, ঋণ চুক্তি অনুমোদন ও স্বাক্ষর ছাড়া অর্থাৎ প্রকল্পের জন্মের আগেই ঠিক করতে হচ্ছে, ঠিকাদার কে হবে। অথচ এটি হওয়ার কথা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর।
চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরকালে ২০১৬ সালে এমন ২৭টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, প্রতিটিই জিটুজি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চীনকে বাধ্য করেছিলেন একটি নয়, পাঁচটি ঠিকাদার মনোনীত করার জন্য, যাতে অন্তত পাঁচটির মধ্যে সীমিত প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু দুই দেশের কেউই সেটি প্রয়োগ না করে একক মনোনীত প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই জিটুজি নামে ঠিকাদার নিয়োগ করছে। যেখানে কারিগরি ও আর্থিক দর-কষাকষি দুটিই নিষ্ফলে যাচ্ছে।
আমার মতে, চীনের ঋণের প্রকল্প গ্রহণই হচ্ছে আমাদের ঋণের চাপ বাড়ানো এবং দুর্নীতির জাল বিস্তার করা। ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ‘ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটিতেও এই চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। ডলার-সংকটের এ সময়ে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ব্যয়ের অংশ বাদ দিয়ে প্রকল্পটি নতুন করে সাজানো যেতে পারে। তার আগে উচ্চপর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে এর সার্বিক দিক নিয়ে তদন্ত করতে হবে।