এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কেমন ছিল? সেটি কি পূরণ হবে?
সাখাওয়াত উল্লাহ: চলতি বছর সারা দেশ থেকে মোট ১ কোটি থেকে ১ কোটি ১০ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। আশা করছি, এটি অর্জিত হবে। অন্যদিকে ঈদের দুই দিনে সাভারে চামড়াশিল্প নগরীতে অবস্থিত ট্যানারিগুলোতে আজ (মঙ্গলবার) ভোর ছয়টা পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ চামড়া এসেছে। এসব চামড়ায় এখন লবণ যুক্ত করা হবে। সব মিলিয়ে এবার কাঁচা চামড়া কেনাকাটার পরিবেশ ভালো ছিল। লবণের দামও সহনীয় রয়েছে।
কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে ট্যানারিগুলোর প্রস্তুতি কেমন?
সাখাওয়াত উল্লাহ: আমরা আগামী পরশু দিন থেকে ঢাকার মধ্যকার লবণ দেওয়া চামড়া সংগ্রহের কাজ শুরু করব। কাজটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। এরপর ঢাকার বাইরের লবণ দেওয়া চামড়া ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা হবে। এটি একটানা আড়াই থেকে তিন মাস সময় ধরে চলবে। অন্যদিকে ট্যানারিগুলোতে এর মাঝেই চামড়া প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ঈদের আগেই কিনে আনা হয়েছে।
হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সিইটিপি) এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলে এবারও দূষণ হতে পারে কি?
সাখাওয়াত উল্লাহ: এক কথায় বললে চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো অসম্পূর্ণ। ফলে দূষণের শঙ্কা থাকছেই। তবে কোরবানির পর বাড়তি চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য রেশনিং করে চামড়া প্রক্রিয়াজাতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে প্রথমে ঢাকার মধ্যকার চামড়া এক সপ্তাহের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত করা হবে; এরপর ধাপে ধাপে অন্য জেলার চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হবে। গত বছরও এভাবে করা হয়েছিল। তাতে দূষণ বন্ধ হয়নি, তবে পরিমাণ অনেক কম ছিল।
কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসন্তুষ্ট। এ বিষয়ে কী বলবেন?
সাখাওয়াত উল্লাহ: ঈদের দিন কয়েক লাখ লোক চামড়া সংগ্রহ করে। এদের কেউ কেউ হয়তো ভালো করবে না। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বড় অংশই ন্যায্য দাম পেয়েছেন বলে মনে করি আমরা। কাঁচা চামড়া বিক্রির একটা নিয়ম আছে। আমরা সব সময় বলে থাকি যে চামড়া ছাড়ানোর ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে তাতে লবণ যুক্ত করতে। এতে চামড়ার গুণগত মান ঠিক থাকে। তবে অধিক মুনাফার লোভে অনেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে। আর সময় যত ব্যয় হয়, দাম তত কমতে থাকে।
গরুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি কি আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল?
সাখাওয়াত উল্লাহ: দেখুন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, পোস্তার আড়তদার ও চামড়া খাতের বিভিন্ন সংগঠনের মতামত এবং আন্তর্জাতিক বাজার দর যাচাই করে বাস্তবতার নিরিখে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কারও একক সিদ্ধান্তে এটি হয়নি।
এবার চামড়া কিনতে ট্যানারির মালিকেরা কেমন বিনিয়োগ করেছেন?
সাখাওয়াত উল্লাহ: সারা বছর যে পরিমাণে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়, এর অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। এ জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। গত বছর ট্যানারির মালিকেরা ব্যাংকগুলো থেকে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পেয়েছিলেন। এ বছর মাত্র ৬০-৭০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া গেছে। চামড়ার মতো বড় একটি খাতের জন্য এটি খুবই কম বলে মনে করি। ট্যানারির মালিকেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে অর্থ জোগাড় করেছেন।
চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানি বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। তবে কোনোটাতে তেমন গতি নেই। এ অবস্থায় করণীয় কী?
সাখাওয়াত উল্লাহ: সাভারে বর্তমানে ১৪২টি ট্যানারি উৎপাদনে রয়েছে। এদের সবাই আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাবে এমন না। আমরা চাচ্ছি শুরুতে অন্তত ২০টা ট্যানারি যাতে এই সনদ পায়। এ জন্য ট্যানারির মালিকেরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে সরকারকে সময় নির্দিষ্ট করে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে আগামী এক বছরের মধ্যেই কয়েকটি ট্যানারির এলডব্লিউজি সনদ অর্জন সম্ভব হবে। এটা হলে বর্তমানে চামড়ার বাজারে দাম নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে, সেটা কেটে যাবে।