কারখানাসহ পণ্য সরবরাহ ও বিপণনের সার্বিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নতুন একটি বিধান পাস করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। গতকাল বুধবার পার্লামেন্টে নতুন এই ‘অবশ্যপালনীয়’ নির্দেশনার ওপর ভোটাভুটি হয়। এর পক্ষে ৩৭৪ ও বিপক্ষে ২৩৫ ভোট পড়ে। ১৯ জন এমপি ভোটদানে বিরত ছিলেন।
এই বিধানের ফলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করে, সবার জন্য নতুন বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে কোম্পানিগুলোকে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশের ক্ষতি প্রতিরোধ, নির্মূল ও প্রশমনে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দাসত্ব, শিশুশ্রম, শ্রমশোষণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, দূষণ এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষতি প্রতিরোধ, বন্ধ ও কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
ইউরোপীয় কোম্পানির পাশাপাশি ওই সব দেশে ব্যবসা করা বাইরের কোম্পানিগুলোর ওপরও এই বিধান কার্যকর হবে। কোম্পানিগুলোকে অবশ্যপালনীয় বিষয়গুলোকে তাদের নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাধ্যবাধকতার বিষয়গুলো প্রতিপালনে বিনিয়োগ করতে হবে। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে এসব বিষয় মেনে চলা হচ্ছে কি না, তার নিশ্চয়তা চাইতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক অংশীদারেরা যাতে নতুন বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলতে পারে, সে জন্য তাদের সহায়তায় ব্যবসা পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হবে। ব্যবসা মডেল যেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেদিকে কর্যক্রম নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ
কোম্পানিগুলো এই বিধান মানছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এবং বিধান লঙ্ঘনের জন্য কোম্পানিকে দণ্ড দেওয়ার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো। যেসব কোম্পানি বিধান লঙ্ঘন করবে, তাদের নাম–পরিচয় প্রকাশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ওই কোম্পানির মোট লেনদেনের ৫ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এ বিষয়গুলোতে সহযোগিতা ও সর্বোত্তম চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ইউরোপীয় কমিশনও একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। অবশ্য পালনীয় বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ হলে যে ক্ষতি হবে, তার দায় কোম্পানিকে নিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বাংলাদেশে প্রভাব
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। এর অন্যতম বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই জোটের দেশগুলোতে অন্যান্য পণ্যও রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বিধান কার্যকর হলে বাংলাদেশে এর কী প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসানের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইইউর এই বিধানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। ইতিবাচক দিক হচ্ছে ইইউর সব দেশের ব্র্যান্ডগুলো উন্নত কর্মপরিবেশের দিকে নজর দেবে। মানবাধিকার ও শ্রমিকের অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকায় খুব বেশি চ্যালেঞ্জ হবে না। আর নেতিবাচক দিক হচ্ছে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র পণ্য সরবরাহকারীরা ব্যবসা থেকে ছিটকে যেতে পারেন।