সরকারের দৃঢ়চিত্ত মনোভাব দরকার

মোস্তাফিজুর রহমান

সামষ্টিক অর্থনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ আমরা এখন মোকাবিলা করছি, সেই কারণগুলোর একটি বৈশ্বিক। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা ও সুশাসনের অভাবও এর জন্য দায়ী। ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণ, অবলোপন—এমন নানা সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এসব সুবিধা না থাকলে প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণ আরও বাড়ত।

অনেকে ইচ্ছা করেই ঋণখেলাপি হন। অর্থ পাচারও হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে শূন্যসহিষ্ণুতা দেখা যায় না। সমস্যা হচ্ছে এই বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশনিং করে রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের সুদহার, বিনিয়োগ—সবকিছুর ওপর এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। খেলাপি ঋণের অর্থ অর্থনীতিতে এলে রিজার্ভ থেকে শুরু করে বৈদেশিক লেনদেন—সবকিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।

আমি মনে করি, সরকারের আলোকিত স্বার্থপরতা থেকে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও সংস্কারে নজর দেওয়া উচিত, তা না হওয়ায় সরকারই বিপদে পড়েছে। সেই সঙ্গে আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে আর্থিক খাতে সংস্কারের কথা বলেছে। বিষয়টি শুধু আইএমএফের শর্ত নয়, বরং সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন থেকে আমাদের এসব করা উচিত। নিজেদের অনুধাবন থেকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে সংস্কারে মনোযোগী হতে হবে।

এই বাস্তবতায় আমরা সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলেছি। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই কমিশন করা যেতে পারে। কিন্তু সে বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিণতিতে অর্থনীতি ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাই শূন্যসহিষ্ণুতা দেখানোর সময় এসেছে। কাজটা সহজ হবে না। বিভিন্ন কায়েমি গোষ্ঠী বাদ সাধবে। সে জন্য সরকারের দৃঢ়চিত্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও তার প্রয়োগ প্রয়োজন।