বিনা অস্ত্রে, বিনা রক্তপাতে ব্যাংক ডাকাতির আরও যত ঘটনা
পরিবহনের সময় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনা নিয়ে নাটক কম হচ্ছে না। ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর। আর এর অর্থ উদ্ধারের কাহিনি আরও আকর্ষণীয়। ডাকাতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অর্থ উদ্ধারের যে কাহিনি বলা হয়েছিল, তাতে আছে নানা ফাঁকফোকর। তবে পুরো ঘটনাটি অবশ্যই ব্যাংক ডাকাতির ইতিহাসে স্থান পাওয়ার মতোই। ওই ডাকাতির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ধরে আলোচনা করলেই বোঝা যাবে, কেন এটি ইতিহাসে স্থান পাওয়ার মতো।
বিনা রক্তপাতে, বিনা অস্ত্রের ব্যাংক ডাকাতি
ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর উত্তরায়। মানি প্ল্যান্ট লিংক (প্রাইভেট) লিমিটেড নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়ি ১১ কোটি টাকা নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সাভারের ইপিজেড বুথে যাচ্ছিল। মাইক্রোবাসে এসে ডাকাত দলটি উত্তরায় টাকাভর্তি গাড়ির পথ রোধ করে এবং গাড়িতে থাকা কর্মীকে চড়থাপ্পড় ও ঘুষি মেরে টাকাভর্তি চারটি ট্রাংক ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাত দলের হাতে কোনো অস্ত্রই ছিল না।
ঘটনাটি শুনলে মনে হবে ব্যাংক ডাকাতি করা কত সহজ। এ জন্য অস্ত্র লাগে না, কোনো রক্তপাতেরও প্রয়োজন হয় না। ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয় কুখ্যাত ফরাসি ব্যাংক ডাকাত আলবার্ট পাগিয়ারির কথা। ১৯৭৬ সালে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফ্রান্সের সোসিয়েট জেনারেল ব্যাংক ডাকাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ব্যাংকের ভল্ট থেকে অন্তত ৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ফরাসি মুদ্রা, স্বর্ণ ও হীরা চুরি করেছিলেন পাগিয়ারি ও তার সঙ্গীরা। এ জন্য অন্য ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা।
প্রথমে ব্যাংকের একটি লকার বা বক্স ভাড়া নেন পাগিয়ারি। বক্সে ছিল একটি অ্যালার্ম ঘড়ি। গভীর রাতে বেজে উঠত সেই অ্যালার্ম ঘড়ি। ভল্টের ভেতরে পাহাড়া থাকে কি না এটা বুঝতে অভিনব এই ব্যবস্থা। তারপর এক রাতে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে দলবল নিয়ে ভল্টে ঢোকেন তারা। চুরি করার পর সেখানে বসে খাওয়াদাওয়াও করেন। তারপর পাগিয়ারি যে কাজটি করেন, সেটাই তাঁকে ইতিহাসে স্থান দিয়েছে। ভল্টের দেয়ালে তিনি লিখে রাখেন, ‘উইদাউট উইপেনস, উইদাউট ভায়োলেন্স অ্যান্ড উইদাউট হেইট’ অর্থাৎ ‘কোনো অস্ত্র ছাড়া, কোনো সহিংসতা ছাড়া, কোনো ঘৃণা ছাড়াই’।
এ ঘটনা নিয়ে ১৯৭৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যে দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তার শিরোনাম ছিল, ‘দ্য হেইস্ট অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীর সেরা ডাকাতি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিনা অস্ত্রে ডাকাতিতে বাংলাদেশের ব্যাংক ডাকাতেরা মোটেই পিছিয়ে নেই।
ডিবি পরিচয়ে কেন ডাকাতি
পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বদরুল হাসান বৃহস্পতিবার রাতেই প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ডাকাতদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তাঁদের একজন নিজেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। ডাকাতেরা সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মীদের চড়থাপ্পড় ও ঘুষি মেরে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। টাকা বহনের সময় নিয়ম অনুযায়ী সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না।’
বিনা অস্ত্র আর রক্তপাতহীন এই ডাকাতির ঘটনার সাফল্যের কারণ কি তাহলে ডিবি পরিচয়? ডিবি পরিচয়ে কাউকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ মাঝেমধ্যেই ওঠে। এ মুহূর্তে গুগলে ‘ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া’ লিখলে ১ লাখ ৩০ হাজার নিউজের লিংক পাওয়া যাচ্ছে। গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনার সময়ে এই ডিবি পরিচয় বিষয়টি বারবারই উঠে আসে। আর হয়তো এই সুযোগটাই নিয়েছে ব্যাংক ডাকাতেরা। তাই ডিবি পরিচয় দেওয়ার পরে কয়েকটি চড়-থাপ্পড়েই কাজ হয়েছে। সহজে করা গেছে ব্যাংকের অর্থ ডাকাতি।
তাহলে অর্থনীতিও জানে ব্যাংক ডাকাতেরা
ব্যাংক ডাকাতি নিয়ে অনেক গবেষণাও আছে। তিন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ সাসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্যারি রেইলি এবং সারে ইউনিভার্সিটির নেইল রিকম্যান ও রবার্ট উইট ব্যাংক ডাকাতি নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। গবেষণায় তাঁরা দেখিয়েছেন ব্যাংক ডাকাতিও একধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর মুনাফা আছে, লোকসান হয়, ঝুঁকিও অনেক এবং এর রিটার্ন বা প্রাপ্তিযোগেরও একটি বিষয় আছে। আবার ডাকাতির কাজে উপকরণ ব্যবহার করতে হয়, শ্রম দিতে হয়, বিনিয়োগ করতে হয় এবং এর পরিচালন ব্যয়ও আছে। তাঁদের এই গবেষণা ব্রিটিশ এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১২ সালের জুনে।
যদিও এই তিন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘ব্যাংক ডাকাতি খুবই খারাপ ধারণা। এ থেকে যে আয় হয়, তা খুবই কম। আর অস্ত্র ব্যবহার করলে শাস্তির আশঙ্কাও বেড়ে যায়। একটি ব্যাংক ডাকাতি থেকে যে প্রাপ্তি, তা থেকে খুব সহজেই বলা যায়, রাবিশ (দ্য রিটার্ন অন অ্যান এভারেজ ব্যাংক রবারি ইজ, ফ্রাঙ্কলি, রাবিশ)। আর এসব কারণেই এখন অস্ত্র হাতে, রক্তপাত ঘটিয়ে ব্যাংকের কোনো একটি শাখা দখল করে ডাকাতির ঘটনা আগের তুলনায় অনেক কমে যাচ্ছে। বরং এখন অর্থ বহনকারী সিকিউরিটি ভ্যান ডাকাতি করা বেশি লাভজনক। এ ক্ষেত্রে এক জায়গায় অর্থও অনেক বেশি পাওয়া যায়, পালিয়ে যাওয়া সহজ। আর এ কারণেই এখন সিকিউরিটি ভ্যান ডাকাতির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিশ্বায়নের এই যুগে ব্যাংক ডাকাতির অর্থনীতি নিয়েও ব্যাংক ডাকাতদের ধারণা আছে। ঝুঁকি বেশি বলে তাঁরা অস্ত্র ব্যবহার করেননি, আর ডাকাতি করেছেন টাকা বহনকারী গাড়ি থেকেই। ব্যাংকের শাখায় যাওয়ার ঝামেলাই করেননি।
ব্যাংক ডাকাতদের সময়জ্ঞান
ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ব্যাংক ডাকাতির আরও একটা ঝামেলা আছে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া আল পাচিনোর বিখ্যাত সিনেমা ‘ডগ ডে আফটারনুন’ অনেকেরই পছন্দের সিনেমা। ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে তারা দেখেছিল ভুল সময়ে এসেছে। কারণ, তখন দিনের নগদ জমা প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে। ফলে শাখার ক্যাশ কাউন্টারে ছিল মাত্র ১ হাজার ১০০ ডলার। সুতরাং কখন ডাকাতি করতে হবে সেটিও একটি বিবেচনার বিষয়। সে কারণেই হয়তো দেশের ডাকাতেরা ব্যাংকে টাকা নেওয়ার সময়টাকেই ডাকাতির জন্য বেছে নিয়েছে।
এবার আরেকটি গবেষণার কথা বলা যাক। দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জিওভান্নি মান্ত্রোবুয়োনি এবং ডেভিড এ রিভার্স গবেষণা করেছেন ব্যাংক ডাকাতদের আচরণ নিয়ে। এ জন্য তাঁরা পাঁচ হাজার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন। আর সেই সমীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দুই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, যত কম সময়ে ব্যাংক ডাকাতি সম্পন্ন করা যায়, সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। তাঁরা একটা সময়ের কথা বলেছেন। যেমন, তিন মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে ব্যাংক ডাকাতি সফল হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উত্তরায় ডাকাতেরা এই নিয়মও অনুসরণ করেছে।
প্রথাগত ব্যাংক ডাকাতেরা যা জানেন না
অপরাধজগতে ব্যাংক ডাকাতদের একধরনের কৌলীন্য আছে। কেননা, তারা স্থান পায় গল্প, উপন্যাস ও সিনেমায়। নানা ধরনের কাহিনি প্রচলিত আছে বিখ্যাত সব ব্যাংক ডাকাতদের নিয়ে। তবে এখন আর তেমন বড় ঘটনা শোনা যায় না। ব্যাংক ডাকাতি নিয়ে তৈরি ওয়েব সিরিজ ‘মানি হেইস্ট’ তুমুল জনপ্রিয় ঠিকই, তবে বাস্তবে তা ঘটানো অসম্ভব। ফলে প্রথাগত ব্যাংক ডাকাতেরা ধীরে ধীরে হয়তো গল্প, উপন্যাস বা সিনেমার পর্দাতেই থেকে যাবেন। এর মধ্যেই হয়তো দু-একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটবে, যেমন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অর্থ ডাকাতি। এটা পুরোপুরি সফল, তা–ও বলা যাবে না। কেননা, শুরুতেই বিপত্তি ঘটেছে। সব অর্থ নিতেও পারেনি। পুলিশ নিশ্চয়ই সব অর্থ উদ্ধারও করতে পারবে।
তা ছাড়া প্রথাগত এসব ব্যাংক ডাকাতদের জানা উচিত ছিল, বাংলাদেশে ব্যাংক ডাকাতির পদ্ধতি গত এক দশকে পাল্টে গেছে। এখানে এখন নতুন নতুন পদ্ধতিতে ব্যাংক ডাকাতি করা হয়। যেমন প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময় শুরুতেই পরপর দুটি বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি হয়েছিল। এর একটি ছিল হল–মার্ক কেলেঙ্কারি, অন্যটি বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি।
এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ২০১২ সালেই জনতা ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘বেসিক ব্যাংকে হয়েছে দুর্নীতি আর সোনালীতে ডাকাতি’ একই বছরে বাজেট আলোচনায় জাতীয় সংসদে আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেছিলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে লুটপাট হয়েছে, সেটা শুধু পুকুরচুরি নয়, সাগরচুরি।’ সাগরচুরি তো আর ছিঁচকে চুরি নয়, আসলে সেটা ডাকাতি। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঘটনার জন্য সাবেক এই অর্থমন্ত্রী সংসদে ও সংসদের বাইরে এর হোতা হিসেবে ব্যাংকেরই সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাইয়ের নাম বারবার বলেছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।
অনেক দিন আগের কথা, ডাকাতেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করত। তাতে ডাকাতদের খুব কষ্ট হতো। এরপর তারা সবাই মিলে একটা বুদ্ধি করে নিজেরাই একটা ব্যাংক তৈরি করে ফেলল। তারপর সব মানুষ সেই ব্যাংকে টাকা রাখতে এল। আর ডাকাতেরা ব্যাংকে বসেই তাদের ডাকাতি চালাতে থাকল।
আবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ২০১৮ সালের ৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘একশ্রেণির লোক আছেন, যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের টাকা তছরুপ করেছেন, ব্যাংকের টাকা ডাকাতি করেছেন। আমরা তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এরপর সরকার ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা তৈরি করে তাদের চিহ্নিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বারবার। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি। বরং যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, তাদের বারবার সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য খেলাপির সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে, বেসরকারি ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে, তাদের অর্থ বৈধ করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকঋণ আত্মসাতের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির যে ধারা দেশে গড়ে উঠেছে, তা মোটেই প্রতিহত করা যায়নি। আর এ কারণেই এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এখন আমাদের উচিত, কারা প্রকৃত আর কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, সেটি খুঁজে বের করা। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির নাটক বন্ধ করা দরকার।’
আবার এখন তো দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ব্যাংকের মালিক, নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার নামে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতে তাঁরাও পিছিয়ে নেই। এ নিয়ে বিস্তারিত না লিখে বরং প্রচলিত একটি কৌতুক আবারও বলা যাক। আর সেটি হলো—অনেক দিন আগের কথা, ডাকাতেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করত। তাতে ডাকাতদের খুব কষ্ট হতো। এরপর তারা সবাই মিলে একটা বুদ্ধি করে নিজেরাই একটা ব্যাংক তৈরি করে ফেলল। তারপর সব মানুষ সেই ব্যাংকে টাকা রাখতে এল। আর ডাকাতেরা ব্যাংকে বসেই তাদের ডাকাতি চালাতে থাকল।
তাহলে কী করা দরকার
সব মিলিয়ে বলা যায়, গবেষকেরাই দেখিয়েছেন প্রথাগত যেসব ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তাতে অর্থের পরিমাণ আসলে খুব বেশি না। যেমন আগে উল্লেখ করা তিন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ তাঁদের গবেষণায় এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ব্যাংক ডাকাতি করে একেকজনের গড় আয় হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার ৭০৬ পাউন্ড, বর্তমান বাজারমূল্যে তা মাত্র ১৬ লাখ টাকা। এই অর্থ দিয়ে সারা জীবন বসে বসে খাওয়ার উপায় নেই। বড়জোর সে সময়ে ছয় মাস কাটানো যেত। ফলে আবার নামতে হবে ব্যাংক ডাকাতিতে, আর একাধিকবার ডাকাতি মানেই ধরা পড়ার আশঙ্কা।’ সুতরাং শেষ বিচারে প্রথাগত ব্যাংক ডাকাতি আসলে লাভজনক নয়। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের বাকি অর্থ উদ্ধার করতে পারলে তাকে প্রমাণ হিসেবেও বলা যাবে।
সুতরাং ব্যাংকের আসল ডাকাতির অর্থ কীভাবে উদ্ধার হবে? এ জন্য অবশ্যই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের প্রতিহত করতে হবে, এরই মধ্যে যাঁরা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করে বহাল তবিয়তে আছেন, তাঁদের শাস্তি দিতে হবে, বেসরকারি ব্যাংকের পরিবারতন্ত্র বাতিল করতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে, ব্যাংক খাতে নিশ্চিত করতে হবে সামগ্রিক সুশাসন। সুতরাং এসব ব্যাংক ডাকাতি বন্ধ করতে পুলিশ বাহিনীর দক্ষতার বদলে বেশি প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের।