সামনে কঠিন সময়, দ্রুত সমাধান বের করা জরুরি
দেশের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে সংকটের মধ্যে আছে। এ নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছে। এর মধ্যে শুরু হলো রাজনৈতিক সংঘাত এবং ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি ব্যাহত হলে আমরা আরও বিপদে পড়ব।
বাস্তবতা হলো, আগামী দুই-আড়াই মাস, অর্থাৎ নির্বাচন পর্যন্ত অর্থনীতির সামনে কঠিন সময়। নির্বাচনের কারণে সরকার রাজনীতিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, অর্থনীতিতে অতটা দিচ্ছে না। অথচ এ সময় রাজনৈতিক সংঘাত ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। সে জন্য খুব দ্রুত এই পরিস্থিতির সমাধান বের করা জরুরি।
শ্রমিকেরা যে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন, তার সঙ্গে কেউই সম্ভবত দ্বিমত পোষণ করেন না।
সরকারও বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারছে। কিন্তু মালিকপক্ষের প্রস্তাব শ্রমিকদের পছন্দ হয়নি। মালিকপক্ষ সব সময়ই চেষ্টা করে—মজুরি কত কম দেওয়া যায়। মজুরি কতটা বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে যৌক্তিক সমাধান দরকার, তার একটা বাস্তবসম্মত হিসাব-নিকাশ থাকা জরুরি। এটাও ঠিক, শেষ পর্যন্ত মজুরি কত বাড়বে, তা উভয় পক্ষের দর-কষাকষির ওপর নির্ভর করবে। তবে বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা উচিত, তা না হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে; আমাদের রিজার্ভে আরও চাপ পড়বে।
মজুরি নির্ধারণে সরকারকে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বিষয়ে সমাধানে আসতে না পেরে মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে বলেছে, সরকার যে মজুরিকাঠামো নির্ধারণ করে দেবে, তারা সেটাই মেনে নেবে। ফলে সরকারের দায়িত্ব বেড়ে গেল। মজুরি বোর্ড বাস্তব পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ প্রস্তাব দিয়ে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সমস্যা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীলতা থাকলে দেশের বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে। অস্থিরতা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীরা দেশে নতুন বিনিয়োগে সাহস পাবে না। এতে কর্মসংস্থানে স্থবিরতা তৈরি হবে; প্রভাব পড়বে দেশের প্রবৃদ্ধিতে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ আরও বাড়বে।
হরতাল ও অবরোধের কারণে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে, তাতে বাজারে পণ্যমূল্য আরও বাড়বে।
সরকার বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে দেড় মাসের বেশি সময় আগে ডিম আমদানির ঘোষণা দেয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ডিম আসেনি। এর মধ্যে আবার আলু আমদানির ঘোষণা দেওয়া হলো। মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির একটি কারণ হলো, সরকার সময়মতো আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না; আবার সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করা কঠিন। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রের সরকারের দীর্ঘসূত্রতা আছে।
এখন সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি, অর্থাৎ যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, তাতে সরকারের উচিত হবে, সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতা আরও বৃদ্ধি করা।