নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু বাজারে এখনো তার প্রতিফলন নেই। দেখা যাচ্ছে, বাজারে সরবরাহ ঘাটতি আছে; এই সংকট মোকাবিলায় যতটা দ্রুততার সঙ্গে আমদানি করা দরকার ছিল, তা হচ্ছে না। কর ছাড় দেওয়া হলেও যথেষ্ট নয়। এই মুহূর্তে মানুষকে মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ থেকে রক্ষায় উচিত হবে, শুল্ক সর্বোচ্চ হারে কমানো।
আগেও বলেছি, বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা আছে। এ ক্ষেত্রে অভিযান চালিয়ে তেমন একটা সুফল পাওয়া যাবে না, বরং উল্টো একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। বাজারে ঘাটতি থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করে সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা করবেন; সেই সুযোগ যেন তাঁরা না পান, তা নিশ্চিত করতে সরবরাহ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
সরবরাহ বৃদ্ধিতে আমদানির অনিয়ম দূর করতে আইনি উদ্যোগ নেওয়া দরকার। দেশের প্রতিযোগিতা কমিশন আছে। এই কমিশনের কাজ হচ্ছে বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী রীতি–নীতি নির্মূল করার পাশাপাশি প্রতিযোগিতা উৎসাহিত করা। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও তাদের কাজ। এই পরিস্থিতিতে আমরা এই কমিশনের কার্যকর ভূমিকা দেখতে চাই। বাজারে কোথায় ও কীভাবে প্রতিযোগিতা বিনষ্ট হচ্ছে বা একচেটিয়া তৈরি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে আইনি উদ্যোগ নিতে হবে এই কমিশনকে। ব্যবসায়ীদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সরবরাহব্যবস্থার কোথায় কী সংকট আছে, তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
সবচেয়ে বড় কথা, যে কথাও আগেও বলেছি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই সংকটের সমাধান করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই মন্ত্রণালয়ের উচিত, অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা।
সমস্যা হচ্ছে, আমদানি ক্ষেত্রে অনেক সময় এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় থাকে না। যেমন ডিম, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই রকম অবস্থান দেখা গেছে।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বছরে একাধিকবার বন্যা হয়। এবারও একাধিকবার বন্যা ও অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। এসব দুর্যোগের কারণে কৃষি উৎপাদন অবধারিতভাবে ব্যাহত হয়। অথচ দেখা যাচ্ছে, সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনায় এসব দুর্যোগের বিষয় আমলে তেমন একটা নেওয়া হয় না।
বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ফসলহানির ঝুঁকি থাকে, কিন্তু তা মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ কি নেওয়া হয়েছে? পরিস্থিতি সঙিন হলে তড়িঘড়ি করে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে কাজ হয় না। সে জন্য আগেভাগে উদ্যোগ নিতে হবে। কখন কী সংকট হতে পারে, সেই ঝুঁকি নিরূপণ করে আমদানির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
সেলিম রায়হান: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।