পুরো স্টার্টআপ খাতেই বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে

ওয়াসীম আলিম

বর্তমান পরিস্থিতি মোটেই ভালো যাচ্ছে না। পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে আমদানি ও সরবরাহ পর্যন্ত—সব ক্ষেত্রেই অসুবিধায় পড়ছি আমরা। চলমান পরিস্থিতিতে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের বাইরে গ্রাহকেরা দামি জিনিসপত্র একেবারে কম কিনছেন। যদিও আমরা চাল–তেলের মতো মৌলিক পণ্যগুলোর মজুত ঠিক রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

অনলাইনে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের লাইফলাইন হলো ইন্টারনেট। কারণ, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট বন্ধের কারণে আমাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আমাদের।

ইন্টারনেট বন্ধের সময় তিন দিন আমাদের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর ফোনে অর্ডার নেওয়ার মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে পণ্য সরবরাহ শুরু করি। এখন ইন্টারনেট মোটামুটি ফিরেছে; ফলে খারাপ অবস্থা থেকে কিছুটা রিকভার করা যাচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব আয় কমই রয়েছে।

শুধু আমরাই নই, দেশে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাঁরা শুধু ফেসবুকে বেচাকেনা করে পরিবার চালান। তাঁদের প্রায় সবাই গত দুই সপ্তাহে খারাপভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে সার্বিকভাবে অর্থনীতিও আক্রান্ত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মানুষ নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্য কম কিনছেন। আমরা যেটা বুঝতে পারছি, একধরনের শঙ্কা ও আয়ের ওপর চাপ বাড়ায় মানুষের মধ্যে খরচ কম করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে ছোট সরবরাহকারীদের জন্যও বেশ কঠিন সময় যাচ্ছে। আমরা দেখতে পেয়েছি, সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ শৃঙ্খলে অনেক ছোট উদ্যোক্তা নেই। এমন অনেক ছোট আমদানিকারক রয়েছেন, যাঁরা দুই–তিনজনের টিম দিয়ে পুরো ব্যবসা চালান। তাঁরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। অনেকের গুদাম রয়েছে মিরপুর, উত্তরা বা যাত্রাবাড়ী এলাকায়। তাঁদের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পুরো স্টার্টআপ খাতেই বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে।

এসব ক্ষতি হয়তো সামাল দেওয়া যাবে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে; বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে, যা আমাদের জন্য নেতিবাচক।

আমাদের মতো কোম্পানিকে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করতে হয়। কারণ, এই বিনিয়োগ পেলে নতুন নতুন সেবা চালু করতে পারি। আবার অনেক ছোট ছোট কোম্পানি আছে, যারা হয়তো ভবিষ্যতে বড় প্রতিষ্ঠান হবে; কিন্তু এখন বিনিয়োগের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।

১০–১১ বছর ধরে আমরা ব্যবসা করছি। প্রায় ২ হাজার ২০০ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এমন সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ ও মূলধন সংকটে পড়লে যে প্রভাব পড়বে, তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

যাঁরা অনলাইনে সরাসরি গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে তাঁদের সামনে বিকল্প পথ থাকে না। ফোনে অর্ডার নিয়ে কাজ চালানো যায়। কিন্তু ফোনের সংযোগও বন্ধ হলে আর কিছুই করার থাকে না। আবার ফোনে অর্ডার নেওয়ার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এটা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়। ফলে ইন্টারনেট যাতে বন্ধ না হয়, সেটিই দেখা উচিত।

এ মুহূর্তে ব্যাংক খাত ও সরকারের কাছ থেকে আমাদের যথাযথ সহযোগিতা করা প্রয়োজন। প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আগামী এক বছরের যে পরিকল্পনা ছিল, যে ধরনের প্রবৃদ্ধির সুযোগ ছিল, সেটা ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ও কম সুদে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।

ওয়াসিম আলিম, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, চালডাল লিমিটেড