অর্থনীতি আগে থেকেই সংকটে ছিল, এখন পরিস্থিতি আরও নাজুক হলো। আমাদের হিসাবে আগের দুই দিনসহ পূর্ণ কারফিউর দিনগুলোতে প্রতিদিন ১০০ কোটি ডলার করে ক্ষতি হয়েছে। তবে আরেকটি ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি। রপ্তানি, বন্দর কার্যক্রমের ক্ষতি হয়েছে, যা পূরণ করা সম্ভব না–ও হতে পারে। আরেকটি ক্ষতি হয়েছে দেশের ভাবমূর্তির। এটা উদ্ধার করতে সময় লাগবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের তেমন চেষ্টা দেখছি না।
অর্থনীতির জন্য দ্রুত যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা হলো কারফিউ তুলে নেওয়া। আমরা দেখছি, ধীরে ধীরে তা করা হচ্ছে। এটা হলে সরবরাহব্যবস্থা ঠিক হবে। কিন্তু ভঙ্গুর একটি অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। মূল্যস্ফীতি কমানো, রিজার্ভ বাড়ানো, কর আহরণ বৃদ্ধি, আর্থিক খাত সংস্কার করা, দুর্নীতি দমন—এসব বিষয় আলোচনা থেকে সরে গেছে। অর্থনীতির স্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। বিনিয়োগ পরিবেশ ধারণাপ্রসূত বিষয়। সরকারের স্থিতিশীলতার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, সেটা মিটিয়ে ফেলতে হবে। এর জন্য দরকার রাজনৈতিক উদ্যোগ। সেই চেষ্টা দৃশ্যমান দেখছি না। সরকারের উচিত দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনায় বসা। সেটা দেখছি না। সাধারণ একটি সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান না করার প্রবণতা আছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় যে বিষয়, তা আমরা গ্রহণ করছি না।
রাজনীতিকে বাদ দিয়ে অর্থনীতিকে চিন্তা করা যাবে না। যেসব ঘটনা ঘটছে, তা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। সমাজে দ্বন্দ্ব থাকলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। টেকসই শান্তির লক্ষ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। এখন যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তার ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে। সেটি হচ্ছেও। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, আবার যেকোনো সময় সমস্যা ফিরে আসতে পারে।
চলমান পরিস্থিতিকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে চলবে না। একে কেবল নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখা যাবে না। আমাদের বসা উচিত। একটা রাজনৈতিক সমাধান বের করতে হবে। আমরা একটি সমঝোতা দেখতে চাই।
লেখক: আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট