বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে নজর দিতে হবে
একদিন পরেই শেষ হচ্ছে ২০২৪। অর্থনীতিতে নানা ধরনের সংকট নিয়েই শুরু হয়েছিল বছরটি, আশাবাদও ছিল। কিন্তু সংকট আর চাপ থেকে আর বের হতে পারেনি অর্থনীতি। বছরের মাঝামাঝি ছাত্র–জনতার প্রবল আন্দোলনে পতন ঘটে দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে এখন দায়িত্ব অর্থনীতির ক্ষত সারানোর, নতুন করে শুরু করার। ২০২৪ সালকে ব্যবসায়ীরা কীভাবে দেখছেন আর নতুন বছরে তাদের প্রত্যাশা কী, তা নিয়েই আমাদের আয়োজন।
ব্যবসায়ীরা ২০২৪ সালে কঠিন সময় পার করেছেন। ডলারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল বছরটিতে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়ের অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা–বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে। শিল্পকারখানায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। অবনতি হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মাসে এসব বিষয় অনেকটা সামাল দিয়েছে।
নতুন বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক। ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখাকে একট বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। এখন প্রবাসী আয় বাড়ছে। রপ্তানি আয়ও বেড়েছে। এই দুয়ের ওপর ভিত্তি করে ডলারের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে, সেদিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়া দরকার। বিনিময় হারের ক্ষেত্রে খুব বেশি অস্থিরতা তৈরি হলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে তা সামাল দেওয়া কঠিন। কারণ, পণ্য বিক্রি করে ডলারে দাম শোধ করতে হয়। হঠাৎ ডলারের দাম বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হয়।
বছর শেষে ডিসেম্বরে এসে আমরা দেখলাম, জাহাজশিল্পে যে কর সুবিধা ছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এই খাতের এখনো বিকাশ হয়নি। তার আগে এমন সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে না। অথচ এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, যেটি এখন বেশি দরকার।
শিল্পের জন্য গ্যাস সরবরাহ এখনো বড় সমস্যা। আমরা কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। ২০২২ সালে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ মেলেনি। শিল্পায়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস–বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সরকারের। কারণ, শিল্পায়ন হলে কর্মসংস্থান হবে। কর্মসংস্থান না হলে বেকারের সংখ্যা বাড়বে, যা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
নিত্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এখন বড় শিল্প খাত। এ বছর ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে বাড়ার পর সরকার শুল্ককর কমিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন বছরে বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ পণ্যর দাম সহনীয় থাকতে পারে। তবে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে হলে ডলারের বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল রাখা জরুরি। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে মূলত ডলারের বিনিময় হার বেশি হওয়ার কারণে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শিল্পের নানা খাতে একের পর এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। নানা দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে এই অস্থিরতা তৈরি হয়। যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। সর্বশেষ নৌপথের কর্মবিরতির উদাহরণ দিই। কর্মবিরতি ডাকার পরপরই নৌযানশ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। তাহলে আলোচনার টেবিলে তার দ্রুত সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কর্মবিরতি শুরুর পর শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলেই কিন্তু সমাধান হয়েছে।
নতুন বছরে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের নজর দেওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে হবে। শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পায়নের জন্য সহায়ক যেসব সুযোগ–সুবিধা ছিল তা অব্যাহত রাখা দরকার। কারণ, বেসরকারি খাতের বিকাশ হলেই কেবল কর্মসংস্থান বাড়বে।
মোস্তফা কামাল, চেয়ারম্যান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)