কেমন বাজেট চাই
কর না বাড়িয়ে ব্যবসার জন্য নীতিসহায়তা দরকার
আগামী ৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে কথা বলেছেন তিনজন অর্থনীতিবিদ ও দুজন ব্যবসায়ী। তাঁরা বলেছেন, এ সময়ে প্রবৃদ্ধির চেয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকঋণের সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে আনতে জোর দেওয়া প্রয়োজন। পণ্য রপ্তানি বাড়াতে নতুন শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে আংশিক বন্ডের সুবিধা দেওয়া দরকার। তাহলে স্থানীয় অনেক কোম্পানি রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। দেশে অনেকের কাছে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ রয়ে গেছে। সেই অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে নিয়ে আসতে উদ্যোগ দরকার। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙা করতে বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।
এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এর ফলে এসএমই খাতের দিকে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাদের কর কমানো দরকার। অন্যদিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনার ক্ষেত্রে দরকার নীতি সহজ করা। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় সংকোচন করা দরকার। এভাবে আগামী দুই বছর চলার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো হবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দিতে হবে। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব নীতি কাজে লাগছে না দেশে। তাই মূল্যস্ফীতি কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে চাকরি–বাকরি দরকার। তার জন্য বিনিয়োগ লাগবে। টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে না রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যে পুনর্ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
ভূরাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে চীন থেকে অনেক দেশের বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছে। এসব বিনিয়োগ থেকে কোন কোন শিল্প আমাদের দেশে আনতে পারি, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা উচিত। পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াতেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ধরা যাক, আগামী পাঁচ বছরে আমরা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে চাই। কোন কোন খাত থেকে এই রপ্তানি আসবে, সেটি প্রথমে চূড়ান্ত করতে হবে। তারপর লক্ষ্য অর্জনে যা যা দরকার, সেসব করতে হবে। যখনই লক্ষ্য অর্জনে সময় দেওয়া হয় না, তখন তা ব্যর্থতায় পরিণত হয়ে থাকে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন করে কর বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ, ব্যবসায়ীরা নানাভাবে চাপে আছেন। কর না বাড়িয়ে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়াতে বাজেটে নীতিসহায়তা দেওয়া দরকার। সোজা কথা হচ্ছে, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে অর্থনীতি বড় করার মাধ্যমে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে হবে সরকারকে। তাতে উভয় পক্ষের লাভ।
অর্থনীতিকে পুরোদমে চাঙা করতে হলে তিন-চার বছরের পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি শক্ত পদক্ষেপও লাগবে। ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, সেগুলো সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দরকার।