গত কয়েক দিনের সহিংস ঘটনায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে—এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এর প্রভাব শিল্প, সেবা, কৃষিসহ অর্থনীতির প্রতিটি খাতের প্রায় সব কার্যক্রমে পড়েছে। অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল এসব খাত। গরিব মানুষ বিশেষ করে দিনমজুরেরা সাময়িক সময়ের জন্য বড় চাপে পড়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব, অর্থনীতির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোদমে চালু করা উচিত।
এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যে ধরনের বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়েছিল, অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখতে তা দূর করা উচিত। এই মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি সক্রিয় করতে পারলে অর্থনীতি দ্রুত স্বাভাবিক গতিতে আসবে। এ জন্য পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন করা দরকার। আর পুরো বাজারব্যবস্থা সচল থাকলে অর্থনীতি দ্রুত সক্রিয় হয়ে যাবে।
অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়ে গেল। চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জন কঠিন হয়ে গেল। এমনকি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন না–ও হতে পারে। সবাই এই ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। তবে সরকারের ইচ্ছাকৃত কর্মকাণ্ডের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনাই বর্তমানে সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির জ্বালায় আছি। গত কয়েক দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতিতে নতুন চাপ কিছু সময়ের জন্য মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের বড় ধরনের ক্ষতি হলো। শুনেছি, অনেক বিদেশি ক্রেতা চলে গেছেন। অনেকে তাঁদের ক্রয়াদেশ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। অচল অবস্থার কারণে অনেক কারখানামালিকের পক্ষে সময়মতো পোশাক ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এসব কারণে বিদেশি পোশাক ক্রেতাদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা, শঙ্কার মধ্যে ছিল প্রায় সব মানুষ। সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে অর্থনীতিতে একটি অপ্রত্যাশিত ক্ষত তৈরি হলো। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাঁরা কুশীলব হিসেবে কাজ করেছেন, এমন ঘটনা ঘটবে, তাঁরা কেউ তা ভাবেননি। উদ্যোক্তাদের যে ক্ষতি হলো, তা পুষিয়ে দিতে সরকার আর্থিক কিংবা নীতিসহায়তার উদ্যোগ নিতে পারে।
লেখক: শামসুল আলম, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী