সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে কিছু নীতি সংস্কার জরুরি
বিশ্ব এমএসএমই দিবস আজ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ঋণ প্রদানে। তারপরও অর্থায়নই প্রধান সমস্যা খাতটির। এমএসএমই দিবস সামনে রেখে এই আয়োজন
কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) জামানতের অভাব থাকায় বেশির ভাগ ব্যাংক এ খাতে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে নিরুৎসাহিত বোধ করে। এই বাস্তবতায় তৃণমূল উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে চলেছে দেশের একমাত্র এসএমই-কেন্দ্রিক ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংক।
বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের ৮৫ শতাংশের বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে জামানত ছাড়াই। ২০০১ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ব্র্যাক ব্যাংক ১৬ লাখ সিএমএসএমই গ্রাহককে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক তৃণমূল উদ্যোক্তাদের আর্থিক অংশীদার হতে চায়।
অর্থায়নের পাশাপাশি আমরা সিএমএসএমইগুলোকে একে অপরের সঙ্গে সংযোগ তৈরিতেও সাহায্য করি। যাতে এসব উদ্যোগ সরবরাহ ও ভ্যালু চেইন উন্নত করার মাধ্যমে বাজারে তাদের সুযোগ প্রসারিত করতে পারে। বিশেষায়িত ‘তারা’ কর্মসূচির মাধ্যমে নারী সিএমএসএমইগুলোকে ব্যাংকিং ও অর্থায়ন–সুবিধা দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। অর্থায়নের পাশাপাশি তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নেটওয়ার্কিং ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকি।
সিএমএসএমই গ্রাহকদের দৈনন্দিন ব্যাংকিং চাহিদা মেটাতে সারা দেশে ব্র্যাক ব্যাংক ৪৫৭টি এসএমই ইউনিট কার্যালয়, ৪৫টি উপশাখা, ১ হাজার ৮০টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৩৩০টি এটিএম সেবা পরিচালনা করছে। ফলে ব্যাংকিং সেবা এসএমইদের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। আমাদের মোট এসএমই ঋণের ৬০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের ১ হাজার ৮০টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট কৌশলগতভাবে প্রতিটি জেলা এবং বেশির ভাগ উপজেলাকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনেছে। আমাদের গ্রামীণ শাখা এবং এজেন্টরা স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগ করে। যাতে ওই লোকালয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ তৈরি করা যায়।
সিএমএসএমইকে সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করা উচিত। ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো যেন টেকসই হতে পারে, সে জন্য বাজারে তাদের প্রবেশের সুযোগ সহজতর করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা আরও সহজ করতে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সিএমএসএমই খাতে সেবার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের কিছু নীতি সংস্কার শুরু করতে হবে।
সিএমএসএমইগুলোর ব্যাংকিং চাহিদা পূরণের জন্য আমরা ডিজিটাল লোন অরিজিনেশন সলিউশন চালু করেছি। এ ধরনের ডিজিটাল সেবা সিএমএসএমইগুলোর দ্রুত, সুলভে ও সহজে ব্যাংকিং সেবা পাওয়া নিশ্চিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থা সিএমএসএমই–বান্ধব নীতিমালা গঠন ও সংস্কার করলে তা এ খাতের উদ্যোক্তাদের সেবা পাওয়া এবং তাঁদের সহজে ব্যবসার সুযোগ বাড়াবে।
এ খাতের কল্যাণে যেসব সংস্কার জরুরি, তার মধ্যে রয়েছে সিএমএসএমইয়ের বিদ্যমান সংজ্ঞা সংশোধন করা, অনানুষ্ঠানিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সিএমএসএমই খাতের অধীন বিবেচনা করা, ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আরও সহজ করা, এ খাতের একক মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ই-কেওয়াইসি চালু, এ খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু এবং তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া সহজ করা, পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও অনলাইন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রেকর্ডগুলো এপিআই সংযোগের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকের পাওয়ার ব্যবস্থা করা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) গ্রাহকদের জন্য একটি ক্রেডিট ব্যুরো স্থাপন, কাগজবিহীন ডিজিটাল স্বাক্ষর চালু করা।
এ ছাড়া সিএমএসএমই অর্থায়ন থেকে অর্জিত আয়ের জন্য ব্যাংকগুলোকে কর রেয়াত–সুবিধা দেওয়া, সিএমএসএমই ব্যবসার জন্য আলাদা করের হার নির্ধারণ, নগদবিহীন লেনদেন প্রসারের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনদেনে কর রেয়াত দেওয়া, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারকে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা, গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণে কাগজভিত্তিক ফাইল ও নথিপত্র ব্যবহার না করে ডিজিটাল স্টোরেজ ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে হবে। এই পরিবর্তনগুলো সিএমএসএমই খাতকে উৎসাহিত করবে এবং তারা আরও বেশি ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবে।
সৈয়দ আবদুল মোমেন, এসএমই বিভাগের প্রধান, ব্র্যাক ব্যাংক