ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ

মোবাইল অপারেটরদের সেবা প্রদানের জন্য একীভূত লাইসেন্স দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ লাইসেন্সপ্রাপ্তিসহ দেশের টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোসহ একাধিক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন গ্রামীণফোনের (জিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান

প্রশ্ন:

আপনারা কদিন আগে একীভূত সনদ পেলেন, সেটি নিয়ে কীভাবে এগোনোর পরিকল্পনা করছেন?

ইয়াসির আজমান: তিন বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতিও চলেছে, যাতে গ্রাহকদের জন্য নতুন উদ্ভাবনী সেবা ও পণ্য চালু করা যায়। রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। একটি একীভূত লাইসেন্স হওয়ায় ব্যবসা পরিচালনাও অনেক সহজ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন:

ফাইভ–জির জন্য আপনারা প্রস্তুত কি না, এটা কীভাবে মানুষের উপকারে লাগবে?

ইয়াসির আজমান: একীভূত লাইসেন্স আর ফাইভ–জি এক বিষয় নয়। তবে সামনে ফাইভ–জির জন্য নতুন করে যে লাইসেন্সের প্রয়োজন ছিল, এখন সেটি আর লাগবে না। ফাইভ–জি কিন্তু স্ট্রং ফাইবার ব্যাকবোন ছাড়া হবে না। ফাইবারাইজেশন গত দুই বছরে আমরা দ্বিগুণ করেছি। গ্রাহকের ব্যক্তিগত ব্যবহারের দিক থেকে ফাইভ–জি আসলে বড় কোনো প্রভাব বা পরিবর্তন আনবে না। মানুষের দরকার ফোর–জি। ফাইভ–জি শিল্প উৎপাদন, কৃষি ও উন্নত প্রযুক্তিতে কাজে লাগবে। দেশের বন্দরগুলোর অটোমেশনে কাজ করবে। এখন দ্রুততম সময়ে, ফাইবারাইজেশন, নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন করতে হবে।

প্রশ্ন:

ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফাইভ–জির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে, বাংলাদেশ কি পিছিয়ে যাবে যদি ফাইভ–জি দেরিতে আসে?

ইয়াসির আজমান: আমার মনে হয় বাংলাদেশে মানুষ দ্রুত প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে। বাংলাদেশকে যদি ফাইভ–জি, ডেটা এবং ডিজিটাল লাইফস্টাইলে যেতে হয়, আমাদের এই মুহূর্তে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ানোয় কাজ করতে হবে। দেশে সাধারণভাবে ডেটা সাবস্ক্রাইব বাড়ছে না। তাই ডেটা ও স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। ডেটা ব্যবহারকারী ও স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

ইয়াসির আজমান
প্রশ্ন:

স্মার্টফোনের ব্যবহার ৫০ শতাংশের নিচে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩১ শতাংশ। এটা কেন?

ইয়াসির আজমান: আমরা যখন বলি স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ—যা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কানেকটিভিটি, ডিজিটাল লাইফস্টাইল ও প্রযুক্তির ব্যবহার। ঢাকার সুযোগ-সুবিধাগুলো যদি প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে যেতে না পারি, তাহলে সমাজে বৈষম্য বাড়তেই থাকবে। যিনি সুবিধাভোগী, তাঁর উন্নতি অনেক বেশি হবে এবং যিনি পিছিয়ে আছেন, তিনি আরও পিছিয়ে যাবেন। আমাদের দ্রুত মানুষের হাতে স্মার্টফোন পৌঁছাতে হবে। স্মার্টফোনের সহজলভ্যতায় নজর দিতে হবে। দাম কমানোর জন্য সরকার কীভাবে করনীতি নিতে পারে, তা ভাবতে হবে। বিশ্বে অপারেটররাই স্মার্টফোন পোস্টপেইডের সঙ্গে কিস্তিতে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে যেখানে ৯৫ শতাংশ প্রিপেইড, সেখানে এই মডেল কাজ করে না। অপারেটর, ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক একসঙ্গে মিলে যেন মানুষের হাতে কিস্তিতে স্মার্টফোন দিতে পারে, এমন ব্যবস্থা থাকতে পারে।

প্রশ্ন:

এখন আপনাদের ব্যবহারকারীদের মধ্যে কত শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে?

ইয়াসির আজমান: আমাদের গ্রাহকদের স্মার্টফোনের ব্যবহার ৫০ শতাংশের মতো হবে। মানুষের হাতে স্মার্টফোনই নেই, তাই কীভাবে সেবাগুলো তাদের কাছে নিয়ে যাব? যেখানে বেশির ভাগ মানুষের কাছে ফোর–জি সেবা পৌঁছানো যাচ্ছে না, সেখানে কীভাবে তাদের ফাইভ–জি সেবা দেবেন? দেশের ফোন ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ এখনো টু–জি বা দ্বিতীয় প্রজন্মের সেবার যুগে রয়ে গেছে। তবে আমি আশাবাদী, একীভূত লাইসেন্স, স্মার্টফোনের ঋণের বিষয়সহ সরকার যদি স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে কিছু সহযোগিতা করে, তাহলে মানুষ দ্রুত তা গ্রহণ করবে।

ইয়াসির আজমান
প্রশ্ন:

ডেটার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, এটাকে কীভাবে দেখছেন?

ইয়াসির আজমান: বিশ্বজুড়ে ডেটার যে দাম, সেই তুলনায় বাংলাদেশে দাম অনেক কম। আগে প্রয়োজন ছিল ১ জিবি, এখন তা হয়েছে ৬ জিবি। আপনি কী কাজে ব্যবহার করবেন, তার ওপর নির্ভর করবে দাম বেশি না কম। ফ্রিল্যান্সিং যে করে, সে দাম বেশি দিয়ে হলেও ভালো সংযোগ চায়। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটালে মনে হবে বেশি টাকা যাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে, ডেটার ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলে অপারেটরের খরচ কমে আসবে। আমাদের বিলাসী পণ্যের মতো কর দিতে হয়। সরকারের করনীতিতে যদি পরিবর্তন আসে এবং বেশি বিনিয়োগ বাড়ে, তবে সব মিলিয়েই খরচ কমবে।