দেশে সোলার পণ্যের বাজার কতটা বড়?
সোহেল রানা: বাংলাদেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রকল্পে সৌরবিদ্যুৎ তথা সোলার প্যানেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ৫৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৯ সালের মধ্যে এটা ২ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। বর্তমানে সৌর প্যানেল ও আনুষঙ্গিক পণ্যের বাজার প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এই বাজার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ সৌরবিদ্যুতের বাজারে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
এ খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
সোহেল রানা: উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সোলার ব্যবহারে ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে। অন্যদিকে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে নীতিগত ও ব্যবহারিক উভয় দিক দিয়ে দেশে সৌরবিদ্যুৎ খাতে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা গেলে বিদ্যুৎ খরচ ২০ শতাংশ কমবে।
সৌরবিদ্যুৎ কীভাবে পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে?
সোহেল রানা: সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন মূলত একটি পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া। সূর্য থেকে সোলার প্যানেল আলো শোষণ করে বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করে, যা দিয়ে পরবর্তী সময়ে লাইট, ফ্যান প্রভৃতি চালানো যায়। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন জ্বালানি তেল, গ্যাস বা কয়লা) প্রয়োজন হয় না। এর ফলে পরিবেশে কম কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গত হয়।
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সরবরাহ বেড়েছে। তাতে কি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে কোনো প্রভাব পড়েছে?
সোহেল রানা: দেশে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সরবরাহ বেড়েছে। গ্রাম পর্যায়েও বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। এতে ব্যাপকভাবে সোলার প্যানেলের ব্যবহার হয়তো বাড়ছে না। তবে দেশের অধিকাংশ এলাকায়, বিশেষ করে গ্রামে এখনো লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের বিকল্প উৎস হিসেবে সোলার ব্যবহার করছেন গ্রাহকেরা। এ ছাড়া কৃষিকাজে, কারখানার কমন স্পেস ও বড় ভবনে সোলারের ব্যবহার রয়েছে।
ওয়ালটনের কত ধরনের সোলার পণ্য রয়েছে?
সোহেল রানা: ওয়ালটন প্রাথমিকভাবে বাসাবাড়িতে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন সোলার পণ্য বাজারে এনেছে। বর্তমানে আমাদের সোলার প্যানেল ছাড়া আনুষঙ্গিক বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে বাল্ব, টিউব, স্ট্রিট লাইট, ডিজিটাল কন্ট্রোলার, কেবলস, ফ্যানসহ প্রায় ৩০ ধরনের পণ্য রয়েছে। ওয়ালটন ও সেইফ ব্র্যান্ড দুটির পণ্যগুলো সারা দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশে গৃহস্থালি সোলার পণ্যের মোট চাহিদার ১০ সথেকে ১৫ শতাংশ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ওয়ালটনের। আর্থিক মূল্যে তা ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকার মতো। আর স্বল্প সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ও বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহার উপযোগী সোলার পণ্যও বাজারে আনবে ওয়ালটন। অর্থাৎ ভোক্তাদের জন্য একটি ‘টোটাল সোলার সলিউশন’ প্যাকেজ সুবিধা দিতে কাজ করছি আমরা।
সোলার পণ্যের ব্যবসায় দেশীয় বিনিয়োগ কেমন রয়েছে?
সোহেল রানা: সোলার পণ্যের বাজার এখনো বহুলাংশে আমদানিনির্ভর। এই আমদানিনির্ভরতা কমাতে কাজ করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। বর্তমানে ১০টির বেশি দেশীয় কোম্পানি সোলার পণ্য তৈরি করছে। এসব প্রতিষ্ঠান চাহিদার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পূরণ করতে পারছে। তারা মূলত বাসাবাড়িতে ব্যবহার উপযোগী সোলার পণ্য বানায়। ফলে এই খাতে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানো ও আমদানিনির্ভরতা কমানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন।