মানুষের কষ্ট হচ্ছে, অস্বীকার করার উপায় নেই: গভর্নর

উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে গত শনিবার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন  ফখরুল ইসলাম

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন হতে চলল। মূল্যস্ফীতি তো এখনো অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতি এত বেশি কেন?

আহসান এইচ মনসুর: মূল্যস্ফীতির হার আগে থেকেই বেশি ছিল। এটি এত দিন কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানো হতো। মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র এখন প্রকাশ করা হচ্ছে। অর্থনীতিতে এত বড় গর্ত করে রেখে গিয়েছে আগের সরকার…। অতিরিক্ত ঋণ, অর্থ পাচার ইত্যাদির মাধ্যমে এ গর্ত তৈরি করা হয়েছে। এত সহজে কি এগুলো ঠিক করা সম্ভব?

প্রথম আলো:

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আপনারা কী করেছেন বা করছেন?

আহসান এইচ মনসুর: মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক আছে। দেখি, আর কী করতে পারি। এখন একটু থামলাম। মুদ্রানীতি পরে আরও সংকোচনমূলকও করতে পারি। নীতি সুদহার কয়েক দফায় বাড়িয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পর ফল পেতে কোনো কোনো দেশে ১৮ মাস লাগে। আমাদের লাগবে ১২ মাস। তা–ও এখন থেকে নয়। একটু পেছনে গিয়ে গত জুলাই থেকে ১২ মাস। আমি খুবই আশাবাদী।

প্রথম আলো:

আপনার এই আশাবাদের ভিত্তি কী?

আহসান এইচ মনসুর: পণ্য আমদানিতে এখন আর ঋণপত্রের (এলসি) মার্জিন বা নগদ জমার সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে আমদানি শুল্ক। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব আগামী মাসেই পড়তে পারে, আবার না–ও পারে। কারণ, আমাদের বুঝতে হবে গত মাসে একটা বন্যা হয়েছে। বন্যার একটা প্রভাব কিন্তু বাজারে পড়তে বাধ্য। আবার বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। যেমন সয়াবিন তেলের দাম হয়ে গেছে প্রতি টন ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার।

আমার আশাবাদের অন্য আরেকটি ভিত্তি হচ্ছে রপ্তানিতে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি। গত চার মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর গত মাসে (অক্টোবর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। প্রবাসী আয়ও (রেমিট্যান্স) ভালো আসছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের কথা যদি বলি, এটা নিম্নমুখী হবে ঠিক। তবে এ হার নেতিবাচক হয়নি, হবেও না। আর আমাদের মাথাপিছু আয় কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়নি।

প্রথম আলো:

আপনার কথা অনুযায়ী এলসি খোলায় এখন আর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু কয়েকটি নিত্যপণ্যে এলসি কম খোলা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে।  

আহসান এইচ মনসুর: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থা এখন ভালো আছে। কোনো ব্যাংক যদি এলসি না খোলে বা কোনো ব্যবসায়ীকে ফিরিয়ে দেয়, তাহলে তিনি যেন আমার কাছে আসেন।  

প্রথম আলো:

নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ভর্তুকি দামে টিসিবির মাধ্যমে কয়েকটি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য রাখা হয়, তা দিয়ে ৩৫০ জনকে পণ্য দেওয়া যায়। লাইনে থাকে আরও মানুষ। এর প্রতিকার কী?

আহসান এইচ মনসুর: মানুষের কষ্ট তো হচ্ছেই। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের কষ্ট কতটা লাঘব করা যায়।