বিশ্লেষণ
বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন কার কাছে ও কেন
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। ৪ টাকা বাড়ে কোন যুক্তিতে।
সাখাওয়াত নামের এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়, জনগণ আপনার কাছে উত্তর প্রত্যাশা করে, প্রশ্ন নয়! আপনি প্রশ্ন রাখেন কার কাছে? আরেক পাঠক মন্তব্য করেন, ‘নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন।’
প্রতিদিন বাজারে গেলে এখন মেজাজ ঠিক রাখা মুশকিল যেকোনো ক্রেতার। পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। এ সময়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে মানুষ চেয়ে আছে সরকারের পদক্ষেপের দিকে। এমন এক পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও অযৌক্তিকভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গটি সামনে এনেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘চালের দাম চার টাকা বাড়ে কোন যুক্তিতে?’
মন্ত্রী যে প্রশ্নটি তুলেছেন, সেটি আসলে দেশের কোটি কোটি মানুষের মনেরই প্রশ্ন। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে এ প্রশ্নই জাগে মানুষের মনে। শুধু চালের বেলায় নয়, সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন। বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেই মানুষ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। উত্তরদাতাই যখন প্রশ্ন করেন, তখন মানুষ উত্তর খুঁজতে কোথায় যাবেন সেই জিজ্ঞাসা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে।
প্রথম আলো অনলাইনে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতিবেদনটি ছাপা হওয়ার পর পাঠকেরা সেখানে নানা মন্তব্য করছেন। সাখাওয়াত নামের এক পাঠক ওই সংবাদের নিচে মন্তব্য করেছেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়, জনগণ আপনার কাছে উওর প্রত্যাশা করে, প্রশ্ন নয়! আপনি প্রশ্ন রাখেন কার কাছে? নাম প্রকাশ না করে আরেক পাঠক মন্তব্য করেন, ‘নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন।’ আরেকজন বলেছেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, তাহলে আপনি কেন?’
সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) টিসিবির পরিবার কার্ডের দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাণিজ্যমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। কিন্তু কেজিতে দাম বেড়েছে চার টাকা। এত টাকা দাম বাড়ার কোনো যুক্তি আছে? কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। আর ব্যবসায়ীরা যখন সুযোগ নেন, একেবারেই নেন।
এর আগে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছি।’ সেই ভুল থেকে তবে কী শিক্ষা নিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ব্যবসায়ীরা ছুঁতো পেলেই দাম বাড়ান।
এটি এ দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার প্রবণতা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই সরকার নিতে পারে না। বাজারে দাম বাড়লে আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তব রূপ পাওয়ার আগেই বাড়তি খরচ সামাল দিতে পকেট উজাড় হয় ভোক্তার। এ অবস্থায় মন্ত্রীদের বক্তব্য যেন মাঝেমধ্যে কাটা গায়ে নুনের ছিটার মতো এসে লাগে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। অথচ দাম নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো পদক্ষেপই এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। উল্টো মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ওপর দায় চাপিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।
জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল। তেলের এ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পণ্যমূল্যে কতটা পড়বে তার কোনো পর্যালোচনা এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করেছে কি? মন্ত্রণালয়ের তো উচিত প্রভাব পর্যালোচনা করে তার তালিকা প্রকাশ করা। তাহলে অন্তত মানুষ জানতে পারত জ্বালানির দামের কারণে পণ্যমূল্যের যৌক্তিক বৃদ্ধি কতটা হওয়া উচিত। তার বেশি দাম রাখলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।