আগের মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতায় নতুন মুদ্রানীতিও সংকোচনমূলক করা হয়েছে। এতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়নি। তবে নীতি সুদহার বাড়ানো হতে পারে, এমন আভাস দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ১০ শতাংশ ও সরকারি খাতে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকার কীভাবে ঋণ নেবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখতে সরকারের উচিত হবে ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে থেকে ঋণ নেওয়া। এদিকে ডলার বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নগদ টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে তারল্যসংকট হতে পারে।
বাস্তবতা হলো, সরকার আগের অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, তা পূরণ হয়নি। এবার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য থাকবে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তা ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। কিন্তু এবারও যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারে, তাহলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্ট হবে।
সমস্যা হলো, বাংলাদেশের মতো দেশে কেবল মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে অন্যান্য ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মুদ্রানীতির প্রভাব সীমিত হতে বাধ্য। খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান না হলে ব্যাংক খাতে সংকট থাকবেই। সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমবে; এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে, কমে যাবে সরবরাহ। এতে মূল্যস্তর বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।
এবারের মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য স্বীকার করেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় প্রভাব পড়ছে। এই স্বীকারোক্তি গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাজস্ব নীতি গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যেতে হবে। কিন্তু মুদ্রানীতি ছাড়া অন্যান্য বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে নেই। ফলে বিষয়টি শেষমেশ নির্ভর করবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর।
মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)