প্রায় এক বছর হতে চলল আপনি রাষ্ট্রমালিকানাধীন এই ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য সরকারি ব্যাংকের তুলনায় জনতা ব্যাংক এখন কেমন করছে?
আবদুল জব্বার: জনতা ব্যাংক একসময় খুবই ভালো অবস্থানে ছিল, তবে বিভিন্ন কারণে আগের সেই অবস্থানে নেই। তা সত্ত্বেও বলব, বর্তমানে অনেক ব্যাংক তীব্র সংকটে রয়েছে, সে তুলনায় আমাদের সমস্যা কিছুটা কম। সংকটের মধ্যেও গত ১ বছরে আমানত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ফলে আমাদের ব্যাংকের আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আমাদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ও ভালো আসছে। গত বছর যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে, চলতি বছরের তিন মাসেই তার অর্ধেক এসেছে। আমরা নতুন করে বড় কোনো ঋণ দিচ্ছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল, বড় গ্রাহকদের ঋণ আর বাড়ানো যাবে না। এ জন্য আমরা বড় গ্রাহকদের বলে দিয়েছি, তারা যে পরিমাণ ঋণ শোধ করবে, তার চেয়ে কম বা সমপরিমাণ ঋণ–সুবিধা দেওয়া হবে। তাদের ঋণের সীমা আর বাড়বে না। তবে আগের কিছু নন–ফান্ডেড দায় সরাসরি ঋণে পরিণত হয়েছে, এ জন্য ঋণ বেড়েছে। তবে গত বছর ঋণ আদায়ও বেশ ভালো হয়েছে। বড় গ্রাহকেরা প্রায় সবাই আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ঋণগ্রহীতা ও বড় ঋণখেলাপি—দুই ধরনের ব্যবসায়ীই জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। তাঁদের ওপর নির্ভর করছে জনতা ব্যাংকের ভবিষ্যৎ? কেমন করছেন তাঁরা।
আবদুল জব্বার: সবাই বলে ব্যবসা–বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। সারা বছর ধরে তাঁরা এই কথা বলে থাকেন। বড়রা কেউ যাতে খেলাপি না হন, সেদিকে তাঁদের নিজেদের নজর আছে। তাই খেলাপি হয়ে গেলেও ঋণ পুনঃতফসিল করছেন। এখন তাঁরা টাকা দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন। বড় খেলাপিদের মধ্যে অ্যাননটেক্সের ঋণ নিয়মিত ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি করে দিতে বলেছে। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণও খেলাপি অবস্থায় আছে। শীর্ষ গ্রাহকদের মধ্যে বেক্সিমকো, এস আলম গ্রুপের ওপর আমরা আস্থাশীল। তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে বলেছি, আর নতুন করে কোনো টাকা দেওয়া হবে না। এতে তারাও সম্মত হয়েছে। তারা যে পরিমাণ ঋণ শোধ করবে, সেই পরিমাণ ঋণ–সুবিধা নিতে পারবে। এটা জনতা ব্যাংকের একটা বড় সাফল্য। আমরা নতুন করে আর কোনো টাকা বেহাত হতে দিতে চাই না। অন্য বিষয়গুলোতে রাতারাতি উন্নতি করা সম্ভব নয়, তবে আমরা আর খারাপ কোনো দৃষ্টান্ত হতে চাই না।
ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংক পথনকশা ঘোষণা করেছে, যেখানে খেলাপি ঋণ কমানো অন্যতম লক্ষ্য। আপনাদের ব্যাংক তো খেলাপি ঋণে শীর্ষ ব্যাংক। কীভাবে কমাবেন?
আবদুল জব্বার: বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব নির্দেশনা দিচ্ছে, আমরা তা অনুসরণ করে পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি। খেলাপি ঋণ কমাতে ইউনিট গঠন করা হয়েছে। তাদের অবস্থান সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে। এর ফলে খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যেও সচেতনতা এসেছে। আগে যেসব গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া যেত না বা ফোন ধরতেন না, তাঁদের সঙ্গে এখন নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিমালার কারণে এগিয়ে আসছেন। আমাদের পরিকল্পনা হলো, জনতা ব্যাংক থেকে আর কোনো বড় ঋণ দেওয়া হবে না। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য যত রকম কঠোরতা ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সবই নেওয়া হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে গ্রাহকদের যত ধরনের সুবিধা দেওয়া যায়, তা দেওয়া হবে।
২০২০ সালে অর্থনীতির গতি বাড়াতে ব্যাংকের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে গতি বাড়েনি। এখন ছেড়ে দেওয়ার ফলে সুদহার সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা কী ধরনের প্রভাব পড়েছে?
আবদুল জব্বার: সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণের কিস্তি বেড়ে গেছে। এতে গ্রাহকেরা কিছুটা চাপে পড়েছেন। ফলে ঋণের কিস্তি যে পরিমাণ আদায় হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তবে একসময় ৬ থেকে ৯ শতাংশ সুদহার ছিল, যা এখন ৯ থেকে ১৩ শতাংশ হয়েছে। এতে ব্যাংকের দিক থেকে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্যাংকগুলোর আয়েও এর বড় প্রভাব পড়েনি। কারণ, ঋণের সুদহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমানতের সুদ হারও বেড়েছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলার–সংকট চলছে। এখন কী অবস্থা?
আবদুল জব্বার: ডলার–সংকট এখন অনেকটা কেটে গেছে। প্রবাসী আয় কাছাকাছি দামে পাওয়া যাচ্ছে। নগদ ডলার এখন ব্যাংকে জমা হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের প্রয়োজন হলে তা অন্য ব্যাংক থেকে পাওয়া যাচ্ছে। আগে অন্য ব্যাংকের কাছে ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। আমদানি দায় পরিশোধে চাহিদামতো ডলার মিলছে। আগের মতো এখন আতঙ্কিত হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই।