নতুন পরিস্থিতিতে নতুন করে চিন্তা করতে হবে

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে দেশজুড়ে সহিংসতা তৈরি হয়। তাতে ব্যবসা–বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে গত রোববার থেকে অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় ব্যবসা–বাণিজ্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে দ্রুত দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

আবুল কাসেম খান

বর্তমানে আমরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ কারও জন্য সুখকর নয়। কয়েক দিনের অচলাবস্থায় অর্থনীতি একপ্রকার স্থবির হয়ে গেছে। দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে সবার আগে তিনটি কাজ করা জরুরি। এগুলো হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, ব্যবসায়ীসহ সব সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করা এবং বহির্বিশ্বের কাছে হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সম্প্রতি অনেক প্রাণহানি হয়েছে, সম্পদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। যাঁরা এ সময়ে নিহত হয়েছেন, তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা বাড়বে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা যাবে, তত তাড়াতাড়ি অর্থনীতির চাকা সচল হবে। অর্থনীতি সচল করার জন্য অবিলম্বে ব্যাংক, উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা জরুরি। এটা আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই করতে হবে। ব্যবসায়ীরা বন্ধ শিল্পকারখানা চালুর বিষয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তাঁদের আস্থায় নিয়ে সব কারখানা সচল করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে হবে।

ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই ক্ষতি সামলাতে সাময়িক সময়ের জন্য তাঁদের কিছু সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। যেমন বন্দরে কার্গো ড্যামেজের জন্য জরিমানা মওকুফ করে দেওয়া যেতে পারে। নীতিনির্ধারকদেরই এ উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী কমিউনিটিরও বড় দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, নতুন পরিস্থিতিতে আমাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এ জন্য সব অংশীজনের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।

দেশে ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ের খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায়, ব্যবসায়ীরা চরম হয়রানির শিকার হন। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসতে চান না। চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম চেতনা হচ্ছে দুর্নীতি বন্ধ করা। ফলে এ বিষয়ে এখন কাজ করতে হবে। কীভাবে করবে, সেটা সরকারের নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীরা মিলে ঠিক করবেন।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সমতা নিশ্চিত করা জরুরি। এটি এক দিনে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য এখনই উদ্যোগ নিয়ে একটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা তৈরি করতে হবে। দেশের ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি উদ্ধারে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।