ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আতঙ্কে আছে কৃষিযন্ত্র খাত

সাদিদ জামিল

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ট্রাক্টর, কম্বাইন হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ নানা ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি ১০ শতাংশ কমেছে। এই ধারা এখনো চলছে। কারণ, ডলারের মূল্য ৩০-৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় যন্ত্রের দামও বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের পক্ষে আধুনিক কৃষিযন্ত্র কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাকিতে কৃষিযন্ত্র বিক্রি করে থাকে। আগে ৩০-৩৫ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে কৃষিযন্ত্র বিক্রি করা হতো। এখন ১০-১৫ শতাংশ এককালীন জমা দিতেই কৃষি উদ্যোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষিযন্ত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের মাসিক কিস্তির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ ৪০-৫০ হাজার টাকা হয়ে গেছে, যা তাঁদের জন্য কষ্টকর। এ জন্য আমরা আগে যেখানে ৩৬ মাসের কিস্তিতে কৃষিযন্ত্র বিক্রি করতাম, সেখানে এখন করি ৪৮ কিস্তিতে। এতে অবশ্য মাসিক কিস্তির পরিমাণ কমে এসেছে। এরপরও খেলাপির হার বেড়ে যাচ্ছে। আগে বাকি দেওয়া অর্থের ৪-৫ শতাংশ আদায় হতো না। এখন ১০ শতাংশের বেশি অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না।

চাষাবাদ ও ফসল কাটা উভয় ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ শতাংশ কম খরচে যন্ত্র দিয়ে কৃষিকাজ সম্পন্ন করা যায়। এ ছাড়া এখন কৃষিশ্রমিকেরও ঘাটতি আছে। এ জন্য আধুনিক কৃষিযন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে, যা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। কম্বাইন হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, রিপারে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেয় সরকার। আর হাওরাঞ্চলে এই যন্ত্র বিক্রিতে দেওয়া হচ্ছে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি। ফলে কৃষিতে এই যন্ত্রের ব্যবহার দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক সময় কৃষকেরা কয়েকজন মিলে এই যন্ত্র কেনেন, আবার শিক্ষিত তরুণেরাও এই যন্ত্র কিনে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছেন। এই ভর্তুকি অব্যাহত না রাখলে কৃষিযন্ত্রের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়বে, উদ্যোক্তাও গড়ে উঠবে না।

বোরো ও আমন মৌসুম আমাদের জন্য বড় সময়, যা সামনে শুরু হবে। সাম্প্রতিক অস্থিরতার ফলে আমাদের বকেয়া টাকা আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কৃষিযন্ত্রকে অনেকেই কৃষি খাতের মধ্যে ফেলতে চান না। এ কারণে বিশেষ সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যন্ত্র নিতে সমস্যা হয়। এ জন্য সরকার থেকে নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।

কৃষিযন্ত্রের বাজারের ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর। ফলে ডলারের দামের ওপর নির্ভর করে কৃষিযন্ত্রের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। আমরা এখন প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় কিনে কৃষিযন্ত্র আমদানি করছি। সামনে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা দিতে হবে বলে ব্যাংকগুলো জানাচ্ছে, এটা হলে বড় ধাক্কা আসবে এই খাতে। ডলারের দাম নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। দাম বেড়ে গেলে বিক্রিও কমে যাবে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃষিযন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেটাল