রাজস্ব খাতে তিন সংস্কার করা উচিত। এত দিন ধরে যে সংস্কার হয়েছে, তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আগামী বছর তিন খাতে সংস্কারে মনোযোগী হওয়া দরকার। প্রথমত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব বিভাগের পূর্ণাঙ্গ অনলাইন কার্যক্রম শেষ করা উচিত।
এখন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আয়করে যেসব অনলাইন ব্যবস্থা আছে, তা পূর্ণাঙ্গ নয়। অনলাইন ব্যবস্থা চালু করতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও এনবিআরের কর্মকর্তা—উভয় পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। তাদের সংস্কারে অনীহা আছে। তাই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এই সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। সরকার নিজেই যদি করখেলাপি থাকে, তখন অন্যদের কাছে কর চাইবে কীভাবে? এই বকেয়া কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃতীয়ত, মামলায় আটকে যাওয়া রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের মধ্যে একধরনের ঢিলেমি আছে। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন কর্মকর্তাকে মামলার নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের উচিত, মামলার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
শুধু করদাতা বাড়িয়ে কর আহরণ বাড়ানো যাবে না। কারণ, নতুন করদাতাদের বেশির ভাগ প্রান্তিক করদাতা। তাঁদের কাছ থেকে তেমন কর আসবে না। বড় করদাতারা কর ফাঁকি দেন। কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদের বিবরণী দিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, অনেকের সম্পদ বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু এনবিআর তা চ্যালেঞ্জ করছে না। ২০০৮ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদের সম্পদ নিয়মিত প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বর্তমান বাস্তব প্রেক্ষাপটে কর কর্মকর্তাদের পক্ষে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া কঠিন।
রাজস্ব খাতে সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ঠিক না করে জনগণের ওপর কর চাপানোর ব্যবস্থা করলে তা ঠিক হবে না।
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সাবেক চেয়ারম্যান এনবিআর