স্বাধীনভাবে ব্যাংকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি

খেলাপি ঋণ কমানো, বেনামি ঋণ বন্ধ ও ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে নতুন পথনকশা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন দেশের মোস্তফা কে. মুজেরী অর্থনীতিবিদ।

মোস্তফা কে. মুজেরীছবি: খালেদ সরকার

ব্যাংক খাতে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। এসব আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার বিভিন্ন সময়ে নানা ঘোষণা দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে পথনকশা ঘোষণা করেছে, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। তবে প্রশ্ন হলো সংস্কারকে কতটা গুরুত্বসহকারে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার সরকারের উচ্চপর্যায় এই সংস্কার কতটা চায়, এটাও একটা বড় প্রশ্ন। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া আর্থিক খাত সংস্কার করা সম্ভব না।

সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখন সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এগোতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পুরো খাতের পরিস্থিতির উন্নতি করার। এ জন্য ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছে, আগে তা বের করতে হবে। সব ব্যাংকই নিজের দুর্বলতা ঢেকে রাখার চেষ্টা করে।

ফলে যে আর্থিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়, তার পুরোটা বিশ্বাসযোগ্য না। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে স্বাধীনভাবে ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারে, আবার বাইরের কাউকে দিয়েও এটা করাতে পারে। নিরপেক্ষ নিরীক্ষায় সত্য চিত্র পাওয়া গেলেই কেবল সত্যিকার অর্থে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা সম্ভব হবে। সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাহলেই সংস্কার পরিপূর্ণ রূপ পাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে কয়েকটি শরিয়াহ ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে জামানত ছাড়া টাকা দিচ্ছে, অন্যদিকে সংস্কারের ঘোষণা দিচ্ছে। আসলে কোনটা চাইছে, এটা বোধগম্য হচ্ছে না। এখন আর্থিক খাতের যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে দু-চারটি ব্যাংক বন্ধ করে দিলেও কোনো সমস্যা নেই। বরং এসব ব্যাংক বাঁচিয়ে রেখে অন্য ব্যাংকগুলোতে সংক্রমণ ছড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ জন্য যোগ্য পরিচালক নিয়োগ করে ব্যাংকগুলো চালাতে হবে। ব্যাংক তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও দক্ষতা দেখাতে হবে। আইনকানুন পরিপালনে কাউকে ছাড় দিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রথা তুলে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবেচনায় সব ব্যাংকের পরিচালকদের এক কাতারে রাখতে হবে। যখন যা সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, তা নিতে হবে। তাহলে এর সুফল পাবে দেশের অর্থনীতি।

  • মোস্তফা কে. মুজেরী, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক