ইআরএফের কর্মশালা
কিছু ব্যক্তির কাছে ব্যাংকসহ দেশের অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে: শিল্প প্রতিমন্ত্রী
ব্যাংক খাতের চলমান অবস্থা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যখন বাজারে যাই, তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনো কিছুর অভাব নেই, আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পন্ন। চাল–ডাল, তরিতরকারি, মাছ-মাংস থেকে সবকিছুতেই স্বয়ংসম্পন্ন। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে এই অবস্থা বিরাজ করছে। যে ব্যক্তি লুটপাট করে বড় লোক হচ্ছেন, তাঁকে আরও সুযোগ দিচ্ছি। ফলে কিছু ব্যক্তির কাছে ব্যাংক থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেট আমাদের ভাঙতে হবে।’
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘আজ অবাক লাগে, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে লাখ লাখ বেকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ মওকুফ করা হয় না। কাদের ঋণ মওকুফ করা হচ্ছে? যাঁরা ব্যাংক থেকে লক্ষকোটি টাকা নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, তাঁদেরটাই বারবার মওকুফ করা হচ্ছে। তাঁরা মওকুফ পেয়ে আবার ঋণ নিচ্ছেন। বড় খেলাপিদের যে ঋণ মওকুফ করা হচ্ছে, সেগুলো যদি এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের দেওয়া হতো, তবে তাঁদের ব্যবসা আরও সমৃদ্ধশালী হতো। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না।’
অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিজয়নগরে ইআরএফের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই কর্মশালা। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল উপস্থাপনা করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
কর্মশালায় কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘আমি ইতিপূর্বেও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি, বড় খেলাপিদের ঋণ যাতে মওকুফ না করা হয়। কিন্তু বারবারই তাঁদের সুবিধা দেওয়া হয়। কারা ব্যাংকের মালিক হয়েছেন, কীভাবে হয়েছেন—এগুলো আপনাদের তুলে ধরতে হবে। আমি অত্যন্ত স্পষ্ট কথা বলি। ঢাকা শহরে আমার রাজনীতির বয়স ৫০ বছর। আমি দেখেছি, অনেকে ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরতেন, অনেকের কাছে টাকা ছিল না, অন্যের কাছে সিগারেট চেয়ে খেতেন। আজ তাঁরা ব্যাংকের মালিক। তাঁরা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন। আমি মনে করি, যাঁরা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন, তাঁদের নামগুলো প্রকাশ করা উচিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের। কেন তারা করে না, আমি জানি না, এটা একটা বড় প্রশ্ন।’
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি ও বাজার—এই দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, যে কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছেন। সিন্ডিকেট ধরতে না পারলে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায়িত্বে থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘দেশ আজ এগিয়ে চলেছে, আমরা আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু তারপরও দেশে আজ যে অরাজকতা ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজ যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে, এগুলো সাংবাদিকদের আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে, এগুলো আরও ফোকাস করতে হবে।’
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘সুগার মিলের যাঁরা আখচাষি, তাঁরাই সুগার মিলের শ্রমিক, যার কারণে মিলগুলোয় লুটপাট হয়েছে। আর লুটপাটের কারণে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের চিনির মিলগুলো যদি যথারীতি চালাতাম, তাহলে বাজারে চিনির দাম এত বাড়ত না। এখন চিনির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, চিনি খুঁজে পাওয়া যায় না—এগুলো হতো না। একইভাবে আমাদের এসএমই খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যাঁরা মুড়ি-চানাচুর বিক্রি করে চলতেন, সেখানেও দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো হাত বাড়িয়েছে। যার কারণে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারছে না।’