এই ঈদেও ব্যবসা জমাতে পারলেন না বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন বঙ্গবাজারের কাপড় ব্যবসায়ীরা। ভেবেছিলেন আরেকটি ঈদ আসার আগে তাঁরা আবার ব্যবসা জমাতে পারবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি শত শত ব্যবসায়ীর।
এপ্রিল মাসের সেই আগুনের পর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে প্রথমে চৌকি পেতে ব্যবসায় ফেরার চেষ্টা করলেও প্রচণ্ড রোদের কারণে তাঁদের ব্যবসা হয়নি। গত ঈদের পর বাঁশের ঘর আর ত্রিপলের ছাউনিতে নতুন করে আরেক দফা ব্যবসা ফেরানোর চেষ্টা করেও খুব বেশি সফল হননি এসব ব্যবসায়ী। আশা ছিল কোরবানির ঈদ। সাধারণত কোরবানির সময় কাপড় বেচাকেনা কম হলেও এবার তা অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে বঙ্গবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো ক্রেতাদের অনেকেই এখনো বঙ্গবাজারের দিকে ভিড়ছেন না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের পুঁজি কম থাকায় মালামালও ওঠাতে পেরেছেন কম। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেসব পাইকার এই বাজারে আসতেন, তাঁদের দেখা মিলছে না। ঢাকায় অনেক ক্রেতার কাছেও বঙ্গবাজারের কাপড়ের চাহিদা ছিল। তাঁরাও এখন কম আসেন। তাই অধিকাংশ পাইকারি ব্যবসায়ী এখন খুচরা দোকানদারে পরিণত হয়েছেন।
মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের পুরোনো ব্যবসায়ী মীম প্যান্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারি বেচাকেনা এখনো ফেরেনি। আগের মতো পাইকারি ব্যবসা হবে, হয়তো সেটা ভাবাও ভুল। কিন্তু খুচরা বিক্রিও যদি ভালোভাবে হতো, টিকে থাকতে আমাদের অসুবিধা হতো না। কেন জানি বঙ্গবাজার থেকে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমরা সবাইকে বলব বঙ্গবাজারে এসে কেনাকাটা করতে।’
অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মধ্যে আগের সেই কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। দিনের বড় একটা সময় তাঁরা গল্পগুজব করে কাটান। কোনো ক্রেতা এলে মালামাল দেখান। অনেকে গরমের মধ্যে অলস সময় পার করেন। পুড়ে যাওয়া জায়গার পুরোটায় এখন ব্যবসায়ীরা বসে পড়েছেন। তবে স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণের পরে এসব ব্যবসায়ী আর সেখানে জায়গা পাবেন কি না, তা নিয়ে তাঁদের মধ্যে সংশয় আছে।
স্টাইল ক্লাব নামের একটা প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতা মো. জসিম প্রথম আলোকে বলেন, বেচাকেনার ওপরেই নির্ভর করে ব্যবসা টিকবে কি টিকবে না। ঈদের আগে যদি সারা দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেচাকেনা হয়, তাহলে তো খরচের টাকাও ওঠে না। এ পরিস্থিতি না পাল্টালে অনেক ব্যবসায়ী টিকে থাকতে পারবেন না।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগের কিছু ব্যবসায়ী ও কর্মচারীকে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ২৫ হাজার টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাহায্য তাঁরা পাননি। এবার ঈদের আগেও তাঁরা তেমন কোনো সহযোগিতা পাবেন বলে আশ্বাস পাননি। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সাহায্যের জন্য ওঠানো টাকা বিতরণের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে টাকা উঠেছে, তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে। তবে প্রতিশ্রুত সব টাকা এখনো ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি। এ জন্য টাকা বিতরণ করা হচ্ছে না। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের বিষয়টি এগিয়ে নিতে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করা যায়, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগরী ও আদর্শ) মোট দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এখন এই দোকানগুলোর চিহ্ন নেই। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মালপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। আর মার্কেটগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।