অনুমোদনের মাত্র ২০ শতাংশ ইলিশ গেছে ভারতে

ইলিশছবি: প্রথম আলো

দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বা গত ১৭ দিনে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৪৮৩ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানি হয়েছে, যা সরকারি অনুমোদনের এক–পঞ্চমাংশ বা ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, দেশে ইলিশ–সংকট ও উচ্চ দাম এবং পশ্চিমবঙ্গে চাহিদা কম থাকার কারণে অনুমোদিত রপ্তানি কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা মতামত ও প্রতিক্রিয়া এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার কারণেও রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি নীতিনির্ধারকেরা যেমন নেতিবাচক মনোভাব দেখান, তেমনি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নাগরিকও রপ্তানি না করার মত দেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইলিশ না খাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলে। এসব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে বলে বেনাপোল স্থলবন্দরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

এদিকে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরা, মজুত বা সংরক্ষণ এবং বিপণন সবই নিষিদ্ধ।

মৎস্য বিভাগ ও বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে এ বছর ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ১৭ দিনে ৪৮৩ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। বন্দরে তখনো অবশ্য ইলিশ বোঝাই আরও কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রাকগুলোর আজ সন্ধ্যায়ই ভারতে ঢোকার কথা।

এ বছর ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ গড়ে ১০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি হয়েছে, যা দেশের ১ হাজার ১৮০ টাকার মতো। দেশের বাজারে অবশ্য আরও অনেক বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হয়, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়, প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরে কমিয়ে ২ হাজার ৪২০ টন করা হয়। এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ২ হাজার ৪০০ টন আর অন্য প্রতিষ্ঠানটি ২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পায়।

বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৭ দিনে এই স্থলবন্দর দিয়ে ৪৮৩ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের অনেকে বাংলাদেশের ইলিশ খাবে না বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। এতেও রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে।’

অনুমোদনের তুলনায় এত কম ইলিশ রপ্তানি হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লাকি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তারেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার আমার প্রতিষ্ঠান ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন পায়। আমরা ৪৬ মেট্রিক টন রপ্তানি করতে পেরেছি। দেশে ইলিশের সংকট থাকায় অনুমোদনের সব ইলিশ রপ্তানি করতে পারিনি।’

কলকাতাভিত্তিক মাছ আমদানিকারকদের সংগঠন ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফআইএ) থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার অনুরোধ জানায়। সরকার ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। ১২ অক্টোবরের (আজ) মধ্যে এই ইলিশ রপ্তানি শেষ করার নির্দেশনা ছিল।

জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, এবার রপ্তানি হওয়া ইলিশের সাইজ ছিল ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজির ওপরে।