এক যুগ পরে কোল্ডস্টোরেজ শ্রমিকদের নতুন মজুরি, সর্বনিম্ন বাড়ল ৭,৯৫০ টাকা

এক যুগেরও বেশি সময় পরে কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগারশিল্প খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নতুন নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করেছে সরকার। নতুন কাঠামোয় এই খাতের শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে মাসিক ১৪ হাজার টাকা।

সর্বশেষ ২০১২ সালের অক্টোবরে হিমাগার শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন এ খাতের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ছিল ৬ হাজার ৫০ টাকা। সে হিসেবে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে অন্তত ৭ হাজার ৯৫০ টাকা। মজুরি বৃদ্ধির হার প্রায় ১৩১ শতাংশ। এ ছাড়া নতুন কাঠামোয় শ্রমিকদের মজুরির ক্ষেত্রে একটি গ্রেড বাড়ানো হয়েছে।

গত ২৭ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী কোল্ডস্টোরেজ শিল্প খাতের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মোট চারটি গ্রেডে শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। সব গ্রেডের শ্রমিকদের চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা সমান রাখা হয়েছে। তবে বাড়িভাড়া ভাতার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। শ্রমিক ও কর্মচারী—উভয়েই মূল মজুরির ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া পাবেন।

কোল্ডস্টোরেজ শিল্পের মজুরি কাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে রয়েছেন ফোরম্যানরা। তাঁদের নিম্নতম মজুরি ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৫০ টাকা। মজুরি কাঠামোতে দ্বিতীয় গ্রেডটি নতুন যোগ করা হয়েছে। এই গ্রেডে রয়েছেন হেড অপারেটর, চিফ অপারেটর এবং অপারেটর ইনচার্জ। তাঁদের জন্য নিম্নতম মজুরি ধরা হয়েছে ২০ হাজার ২৬৪ টাকা। তৃতীয় গ্রেডে রয়েছেন সুপারভাইজার, স্টোর কিপার, অপারেটর ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি; যাঁদের নিম্নতম মজুরি ১৯ হাজার ৪০০ টাকা। আর চতুর্থ গ্রেডে থাকা সহকারী সুপারভাইজার, সহকারী স্টোরকিপার, সহকারী অপারেটর, ট্যাংকম্যান ও হেলপারদের জন্য নিম্নতম মজুরি ধরা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।

আগের অর্থাৎ ২০১২ সালের মজুরি কাঠামোয় দক্ষ হিসেবে বিবেচিত প্রথম গ্রেডের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ১১ হাজার ৩০০ টাকা। সে সময় দ্বিতীয় গ্রেডে থাকা আধা-দক্ষ শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৯ হাজার ৮০০ টাকা। আর তৃতীয় গ্রেডে থাকা অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ৬ হাজার ৫০ টাকা নিম্নতম মজুরি ছিল। এ ছাড়া শিক্ষানবিশ শ্রমিকের ক্ষেত্রে এবার নিম্নতম মজুরি ৯ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০১২ সালে ৩ হাজার টাকা ছিল। এ খাতে শ্রমিকের শিক্ষানবিশকাল ধরা হয়েছে তিন মাস।

প্রজ্ঞাপনে হিমাগারশিল্পের শ্রমিকের পাশাপাশি কর্মচারীদের নিম্নতম মজুরিও ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মচারীদের ক্ষেত্রে মোট তিনটি গ্রেড রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন বা তৃতীয় গ্রেডে রয়েছেন পিয়ন, দারোয়ান ও ঝাড়ুদার। তাঁদের নিম্নতম মজুরি ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯৫০ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে থাকা কম্পিউটার অপারেটর, সহকারী হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার ও কেরানির জন্য মাসিক মজুরি হবে ১৭ হাজার ৭৫ টাকা। আর কর্মচারীদের মধ্যে প্রথম গ্রেডে থাকা হিসাবরক্ষকদের নিম্নতম মজুরি ঠিক করা হয়েছে ২১ হাজার ৩৫০ টাকা। কর্মচারীর ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকাল ছয় মাস। আর শিক্ষানবিশকালে তাঁদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ১০০ টাকা।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বর্তমানে যাঁরা যে গ্রেডে কর্মরত রয়েছেন, সেই গ্রেড অনুসারে তাঁদের নতুন মজুরি কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। কোনো শ্রমিককে নিম্নতম মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়া যাবে না। আবার কেউ ইতিমধ্যে নিম্নতম মজুরির চেয়ে বেশি মজুরি পেলে, তাঁর মজুরি কর্তন করা যাবে না। নিম্নতম মজুরির প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর থেকে প্রতিবছর মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

এ ছাড়া হিমাগারশিল্প খাতে ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োজিত শ্রমিকদেরও সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছে প্রাপ্য পাওনার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হলে তার দায় মালিকপক্ষকে নিতে হবে। কোনো মালিক শ্রমিককে পূরণভিত্তিক বা পিস রেট অথবা দৈনিকভিত্তিক মজুরি প্রদান করলে, তাঁদের ক্ষেত্রেও সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়া যাবে না।