অর্থনীতি ভালো চলছে, সবার থেকে ভালো করছে: অর্থমন্ত্রী
বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো চলছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তিনি আবারও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। অর্থমন্ত্রী এটাও বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্বে আসার সময় মূল্যস্ফীতি যা ছিল, বর্তমানে তার চেয়েও কম আছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং নতুন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বৈঠকে যোগ দিলেও অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁরা উপস্থিত ছিলেন না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তাঁরা অর্থনীতিই বোঝেন না।’
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। এখন তা ৯ শতাংশের মতো। এ মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে।’ এ দুরবস্থার মধ্যেও মূল্যস্ফীতি যে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে, তা সরকারের যথাযথ আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণেই সম্ভব হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী মনে করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, এটা ঠিক। যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা কবে শেষ হবে, কেউ জানে না।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কত দিন আপনি অর্থনীতি হিসাবমতো চালাবেন? মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তারপরও অর্থনীতি অনেক ভালো চলছে। সবাই বলে বাংলাদেশ সবার থেকে ভালো করছে। আর আপনারা খারাপটা কামনা করেন কেন। ভালো কামনা করেন।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা এখানে দেখা করতে এসেছেন, তাঁরা বিভিন্ন শিল্প ও বিনিয়োগ খাত থেকে এসেছেন। তাঁদের কেউ ইলেকট্রনিকস, কেউ বিদ্যুৎ খাত এবং কেউ বিমা খাতে কাজ করেন। তাঁরা বাংলাদেশে কী করে তাঁদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করবেন, তা বলেছেন। আমরাও বলেছি, এখানে অনেক সুযোগ আছে। তাঁরা বিভিন্ন সুবিধা চান। কিছু সুবিধা এমনিতেই তাঁরা পান। আরও চেয়েছেন। এ দেশে ব্যবসা করতে এসে কেউ ব্যর্থ হননি। আমরা তাঁদের এ দেশে আরও বিনিয়োগ করতে বলেছি।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে কোন ব্যবসাটা ব্যর্থ হয়েছে, আপনারাই বলেন? এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগ যেকোনো খাতেই আসুক না কেন, কোনোটা কি ব্যর্থ হয়েছে যে টাকা নিয়ে খালি পকেটে তারা চলে গেছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নজিরবিহীন সুযোগের দেশ। এখানে বিনিয়োগ করে লোকসানের কোনো সুযোগ নেই। এখন যদি বিনিয়োগ বা ব্যবসা না করে টাকা পকেটে নিয়ে ঘোরেন, সেটি ভিন্ন জিনিস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যবসার জায়গা।’
মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা কোন কোন খাতে বিনিয়োগ আগ্রহী, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তাঁরা সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান—কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও মোটরগাড়ি।
তাঁরা কী চেয়েছেন, আর আপনি কী জবাব দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, একেক খাতের জন্য তাঁরা কর অবকাশ-সুবিধা চেয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্নভাবে তাঁদের পাওয়ার পয়েন্টে দেখিয়েছেন বর্তমানে কী সুবিধা দেওয়া হয়, কী হয় না।
মার্কিন ব্যবসায়ীদের কর অবকাশ চাওয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়ে আগেও জানানো হয়েছে। মেড ইন বাংলাদেশ—এ ধারণা তাঁরা যদি সম্প্রসারিত করেন, তাহলে বাংলাদেশের উন্নতি হবে। যাঁরা বিনিয়োগ করবেন, তাঁদেরও ভালো হবে। এখন এ ধারণাটার মধ্য দিয়ে আমরা দেশে দ্রুততার সঙ্গে কর্মসংস্থান খাতে উন্নয়ন করতে চাই।
ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সয়াবিন তেল রপ্তানি করতে চায়। আর কৃষি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। এ ছাড়া দেশটির আর্থিক খাতের কোম্পানি ‘ভিসা’ এ দেশে দেখতে চায় ক্যাশলেস সমাজ। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য গ্রাহকের দেশ হবে বলেও তারা মনে করছে।