ঈদের আগে চড়া মসলার বাজার
ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের বাকি আর দুই দিন। ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় বাজার সারছেন ভোক্তারা; তবে পণ্যের দাম ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। বিশেষ করে মসলাজাতীয় পণ্যের বাজার এখন বেশ চড়া। গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে এলাচি, জিরা, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। বাজারে এখন দাম কমার তালিকায় রয়েছে কেবল ব্রয়লার মুরগি ও কয়েক ধরনের সবজি।
কোরবানি এলে সাধারণ মসলা পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে দামও। বেশ কিছু মসলার দাম গত কোরবানির আগের দামের তুলনায় এখন বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশে মসলার বার্ষিক বাজার এখন ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। তবে এসব পণ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদুল ফিতরের পর থেকেই বাজারে মসলা পণ্যের দাম বাড়ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত দুটি কারণকে দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, এই দুই কারণ হলো, বিশ্ববাজারে কিছু মসলা পণ্যের বাড়তি দাম এবং দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসে ডলারের মধ্যবর্তী দাম নির্ধারণ করে ১১৭ টাকায়। সে সময় ডলারের দাম একবারেই বাড়ে ৭ টাকা। আমদানিকারকেরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে গেছে।
দাম বাড়ায় সবচেয়ে এগিয়ে এলাচি। মাসখানেক আগে প্রতি কেজি ছোট এলাচি বিক্রি হতো ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে এখন তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর কোরবানির আগে ছোট এলাচির দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম প্রায় দেড় গুণের বেশি বেড়েছে।
অন্যদিকে বড় আকারের এলাচির দাম আরেকটু বেশি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তা সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ও গুয়াতেমালায় এলাচির উৎপাদন কম হওয়ায় দেশ দুটিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবও দেশের বাজারে এলাচির মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে।
কোরবানির সময় দারুচিনির চাহিদাও বেশ বাড়ে। বর্তমানে বাজারে দারুচিনির কেজি ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা। এক মাস আগেও যা কেজিতে ৫০ টাকা কম ছিল। আর গত বছর কোরবানির আগে দারুচিনি বিক্রি হয়েছিল ৪৬০-৫২০ টাকা কেজি দরে।
অন্যান্য মসলা পণ্যের মধ্যে বর্তমানে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৬০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। গত কোরবানির আগে এর দাম কেজিপ্রতি ২০০-৪০০ টাকা কম ছিল। ধনিয়ার কেজি এখন ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। বছরখানেক আগে যা ছিল ১৩০-১৬০ টাকা। প্রতি কেজি তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা। এক মাসে এই পণ্যের দাম ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। গত বছর এ সময় তেজপাতার দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এ ছাড়া জয়ত্রী ৪ হাজার টাকা, জয়ফল দেড় হাজার টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা ও কাঠবাদাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।
তবে গত কোরবানির আগের তুলনায় দাম খানিকটা কম দেখা গেছে জিরার ক্ষেত্রে। বাজারে এখন প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮৮০ টাকায়। টিসিবির হিসাবে, গত বছর কোরবানির আগে প্রতি কেজি জিরা ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এক মাস আগের তুলনায় অবশ্য জিরার দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক মাসে আগে জিরার দাম বর্তমানের তুলনায় কেজিতে ৩০-৫০ টাকা কম ছিল।
পেঁয়াজ-রসুন-আদাও বাড়তি
বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬৫-৭৫ টাকা। গতকাল বাজারভেদে ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের কোরবানির আগের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানেই দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের রসুনের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল বাজারভেদে দেশি রসুন ২১০-২৩০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২২০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আরেক মসলা পণ্য আদার দামও কেজিতে ৪০-৬০ টাকা বেড়েছে। গতকাল আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩২০ টাকা দরে। দেশি আদার দাম আরও বেশি।
সবজির মধ্যে টমেটো ও শসার দাম কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়েছে। অন্যান্য সবজির দাম মোটামুটি অপরিবর্তিত রয়েছে। মুরগির বাদামি ডিমের ডজন এখন ১৬০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকার মতো কমেছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায়। আর বাজারভেদে সোনালি মুরগির দাম ছিল ২৮০-৩২০ টাকা।
গতকাল শেওড়াপাড়া বাজারে একটি মুদিদোকান থেকে মসলা কেনেন গৃহিণী জিনাত আরা বেগম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পাঁচ ধরনের মসলা কিনলাম, তাতেই দাম এল ১ হাজার ৩৯০ টাকা। ইদানীং গুনে গুনে জিনিসপত্র কিনছি, তা–ও পারা যাচ্ছে না। তিনটা পণ্য কিনতে এলে একটা না কিনেই ফিরে যেতে হয়।’