চারদিক থেকে বিপদ ঘিরে ধরেছে ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানিকে। এমন এক সময়ে তাঁর মালিকানধীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্টক জালিয়াতির অভিযোগ উঠল, যখন তার দুই দিন পরই ছিল আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও (ফলো অন পাবলিক অফার–তালিকাভুক্ত কোম্পানির নতুন শেয়ার ইস্যু) বাজারে আসার কথা। কিন্তু তার মধ্যেই পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে যে এই এফপিও ইস্যুকারী ব্যাংকগুলো এখন এই এফপিওর দাম কমানো বা শিডিউল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।
তবে আদানি গোষ্ঠী যেভাবে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছে, একইভাবে বলেছে, এই এফপিওর দাম বা শিডিউল পরিবর্তনের কথা ভাবছে না তারা। আরও বলেছে, আমাদের সব অংশীদার, যেমন ব্যাংকার ও বিনিয়োগকারীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখে। এই এফপিওর সফলতার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি গোষ্ঠীর সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। গত দুই-তিন বছরে তাদের ব্যবসা রীতিমতো ফুলে–ফেঁপে উঠেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম বাড়লে আদানি তরতর করে ধনীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে চলে আসেন। কিন্তু গত বুধবার হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধন ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার কমেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও ইস্যুকারীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে, এর কাটতি তেমন একটা তৈরি হবে না। আগামী মঙ্গলবার এই এফিপও কেনার শেষ দিন। ইস্যুকারীরা এই সময় চার দিন পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে চায়। শুক্রবার এই এফপিওর দাম ২০ শতাংশ কমেছে। ফলে সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম দামের চেয়ে ১১ শতাংশ নিচে নেমে গেছে এর দাম। সেদিন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ বিক্রি হয়েছে এই এফপিও। সে কারণে এই এফপিওর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই এফপিওর মূল্যস্তর ৩ হাজার ১১২ রুপি নির্ধারণ করেছিল আদানি গোষ্ঠী। অথচ শুক্রবার বাজারে তার দাম নেমে আসে ২ হাজার ৭৬১ রুপি। এই এফপিওতে শেয়ার ছাড়া হয়েছিল সাড়ে চার কোটি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ লাখ ৭০ হাজার ১৬০টি শেয়ার কেনার বায়না দিয়েছেন। এ ঘটনায় রীতিমতো স্তম্ভিত।
সরব ভারতের বিরোধীরা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শাসকদল বিজেপির সঙ্গে গৌতম আদানির সুসম্পর্কের কথা সুবিদিত। ফলে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্টক জালিয়াতি ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে ভারতের বিরোধী দলগুলো।
গতকাল শনিবার দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রশ্ন, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হওয়ায় এলআইসি ও স্টেট ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য ৭৮ হাজার কোটি রুপি কমলেও অর্থমন্ত্রী নীরব কেন? তদন্তকারী সংস্থাগুলোও কেন নীরব? খবর ইকোনমিক টাইমসের।
এদিকে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তিনি বলেন, হিনডেনবার্গ আদানিদের সম্পর্কে এত গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আনার পরেও এলআইসি ও এসবিআইয়ের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো আদানির কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বহাল রেখেছে কেন।
এদিকে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেছেন, হিনডেনবার্গের নেতিবাচক প্রতিবেদনে শেয়ারবাজার ধাক্কা খাচ্ছে। জড়িয়ে পড়েছে ভারতের কোটি কোটি মানুষের অতি কষ্টে উপার্জিত অর্থ। অথচ সরকার এ বিষয়ে স্পিকটি নট। অবিলম্বে সরকারি বিবৃতি দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তিনি।