ঢাকার শেয়ারবাজারে ‘প্যানিক সেল’, সূচকের বড় পতন
শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার লেনদেন শুরুর পরপরই যে দরপতন শুরু হয়, তা অব্যাহত থাকে শেষ পর্যন্ত। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ‘প্যানিক সেল’ বা আতঙ্কিত হয়ে বিক্রির কারণে এই দরপতন হয়েছে বলে জানান বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১০৫ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। তাতে সূচকটি নেমে এসেছে ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্টে। লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটে ঢাকার বাজারে মাত্র পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে। অর্থাৎ লেনদেনের শুরু থেকে ছিল বিক্রির প্রচণ্ড চাপ। কে কার আগে শেয়ার বিক্রি করবেন, এমন মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে বলে বাজার সূত্রে জানা গেছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার বা ইউনিটের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। তাই দিনের শুরুতেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার ৩ শতাংশ কম দামে বিক্রির চেষ্টা করেন। শুরুতে বাজারে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতা ছিল কম। ফলে শেয়ারের হাতবদল হয়েছে খুবই কম। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কেউই নতুন করে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি শুরু করায় বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজার আবার তার স্বাভাবিক রূপ ফিরে পাবে।’
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২০৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ১৮ জুলাই এই বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫৯ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় কারফিউ জারি ও সাধারণ ছুটির পর ২৪ জুলাই শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। ওই দিনও সূচকের বড় পতন হয়েছিল। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৯৫ পয়েন্ট।
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭২টিরই দাম কমেছে। অর্থাৎ লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৪ শতাংশের দরপতন হয়েছে। এদিন দরপতন এতই মারাত্মক ছিল যে ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকাটি অপূর্ণাঙ্গ ছিল। কারণ, দাম বাড়ে মাত্র ৬ কোম্পানির।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে সশরীর উপস্থিতি বলতে গেলে ছিলই না। দুপুরের পর মুঠোফোনে ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে লেনদেনে অংশ নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।