কী ঘটছে তরমুজের বাজারে

তরমুজ

ঢাকার বাজারে তরমুজের দাম বেশ কমেছে। রোজার শুরুতে ১০ কেজি ওজনের যে তরমুজ ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেটির দাম এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। অর্থাৎ তরমুজের কেজিপ্রতি দাম ৮০ টাকা থেকে কমে ৩০-৪০ টাকায় নেমে এসেছে।

বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশি দামের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়কটের ডাকে ভোক্তারা ব্যাপকভাবে সাড়া দোওয়ায় তরমুজের দামে প্রভাব পড়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখে বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ এখন কেজির পরিবর্তে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছেন।

রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম বেশি থাকার কারণে রোজার প্রথম দিকে তরমুজ বিক্রি কমে গিয়েছিল। তখন অবশ্য কৃষক-ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় অপুষ্ট তরমুজ বিক্রি করেন।

ওই তরমুজে তেমন স্বাদ ছিল না। এটিও তরমুজ বিক্রি কমার একটি কারণ। বর্তমানে বাজারে যেসব তরমুজ পাওয়া যায়, সেগুলো যেমন হৃষ্টপুষ্ট ও পরিপক্ক, তেমনি দামও আগের তুলনায় অনেক কম। ফলে ভোক্তারা তরমুজ কিনতে শুরু করেছেন। তবে এখনো বাজারে তরমুজের স্বাভাবিক চাহিদা ও বিক্রির জায়গায় যায়নি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলেন, এবারের রোজায় গরম কম পড়ায় তরমুজের চাহিদা কম।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি তরমুজ বিক্রেতা নাদিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবার তরমুজের বাজার খুব সুবিধার নয়। দাম ভালো না পাওয়ায় বরিশাল ও পটুয়াখালীর মতো এলাকা থেকে তরমুজ এনে গাড়িভাড়া দিয়ে পোষানো যাচ্ছে না। প্রথম দিকে বাজারে তরমুজের চাহিদা একেবারে পড়ে গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না।

মালিবাগ এলাকার ফল বিক্রেতা নাজিরুল ইসলামের অভিজ্ঞতাও একই ধরনের। তিনি বলেন, ‘তরমুজের মৌসুম শুরু হওয়ার পরেই বাজারে কেজিতে নাকি পিস হিসেবে বিক্রি হবে, এ নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়। অনেকেই কেজিতে তরমুজ কিনতে চাননি। তাতে বিক্রি পড়ে যায়। এখন আমার মতো অনেকেই পিস হিসেবে বিক্রি করছেন। তবে পিস হিসেবে বিক্রি করলেও আমাদের হিসাব থাকে। ৫-৬ কেজির তরমুজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আর ১০ কেজির কাছাকাছি তরমুজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজারে কোথাও কোথাও তরমুজের দাম আরও কম দেখা গেছে। সেসব জায়গায় প্রতিটি তরমুজ একদর ১০০ টাকা ও ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কেজিপ্রতি তরমুজ বিক্রির সুযোগ নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। কারণ, এসব তরমুজ কৃষক পর্যায়ে কিংবা রাজধানীর বাদামতলী ও ওয়াইজঘাটের মতো পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় না।

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম শেখ বলেন, ‘তরমুজের দাম কমে এসেছে। এখন বাজারটা যে পর্যায়ে আছে, সেটা ক্রেতাদের জন্য ভালো। তবে কৃষকেরা লোকসান করছেন কি না, সেটা দেখার বিষয়।’ এ ছাড়া বাজারে কেজিতে তরমুজ বিক্রি করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর তরমুজচাষি মিথেল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে তরমুজ বিক্রি করে দেড়–দুই লাখ টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কারণ, পাইকারেরা বেশি দাম বলছেন না। এক ধরনের মধ্যস্বত্বভোগী বাজারটা নষ্ট করেছে। তারা আমাদের কাছ থেকে কম দামে তরমুজ কিনে নিয়ে চড়া দরে বিক্রি করছে। এ ছাড়া কেজিতে তরমুজ বিক্রি নিয়ে ফেসবুকে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ফলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অথচ কৃষকেরা কখনোই কেজিতে তরমুজ বিক্রি করেন না। সব মিলিয়ে আমরা লোকসানের শিকার হয়েছি।’

বাজারে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির সুযোগ নেই বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, কৃষকেরা মাঠে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করেন। সেটা বাজারে এসে কেজিতে বিক্রির সুযোগ নেই।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, পটুয়াখালী]